
রাসেল আহাম্মেদ, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
খুলনার কয়রায় দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী গতকাল ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সেচ্ছায় মেরামতের কাজ করছেন ভুক্তভোগী স্থানীয় জনগণ।
আজ (১৮ই জুলাই) সোমবার সকাল ৭টা থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে এ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ।
গতকাল রবিবার ভোররাতে উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৪/১ নং পোল্ডারের চরামুখা নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী বেঁড়িবাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতের প্রাণপণ চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি, দুপরের জোয়ারে পুনরায় পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয় এলাকা।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে শখের ঘর-বাড়ি, জায়গা-জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। গতকালকে দুই বার জোয়ারে পানি প্রবেশ করে বর্তমানে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ভেসে গেছে প্রায় তিন হাজার বিঘার বেশি মৎস ঘের, ডুবে গেছে কৃষকের এ বছরের জন্য প্রস্তুতকৃত আমনের বীজতলা। বসত বাড়ি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন আবার কেউ বা সাইক্লোন শেল্টারে ।
রোববার সকালে এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দুপরের জোয়ারে পুনরায় পানি প্রবেশ করে। জোয়ার শেষে রাতে পুনরায় বাঁধ মেরামতে নেমেছেন এলাকাবাসী।
বাঁধ মেরামতের কাজে আসা একাধিক ব্যক্তি বলেন, ভাঙনের কারণে আমাদের ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছ । এখন কোথায় থাকব, কোথায় খাব কিছু জানি না। রান্না-বান্নার করার কোন ব্যবস্থা নেই। সে কারণে সবকিছু ফেলে বাঁধ মেরামতের কাজে ছুটে এসেছি।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আছের আলী মোড়ল জানান, বাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থান দ্রুত মেরামত করা না হলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে মানুষজন। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি মেরামতের দাবি জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়নের (বোর্ড বিভাগ-২) উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. মশিউল আবেদীন বলেন, প্রাথমিকভাবে রিংবাঁধের মাধ্যমে পানি আটকানোর জন্য স্থানীয়রা কাজ করছে। এ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত সরাঞ্জাম বস্তা ও বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করছে। পানি আটকানো পর মূল ক্লোজারে কাজ করা হবে বলে জানান।
বারবার প্লাবিত হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস.এম শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙন যেন কয়রার মানুষের পিছু ছাড়ছে না। যখনই কয়রার মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ঠিক তখন আবার কোন না কোন জায়গায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। তখন আবারও লোকালয় প্লাবিত হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে রিং-বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।