
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আসছে ‘হাসিনা এ্যাকশন’
* চরম শঙ্কায় দলবাজ লুটেরাচক্র * লুটেরা সমর্থক নেতারাও রেহাই পাচ্ছেন না * প্রাথমিক পর্যায়ে ১৭০০ জনের নাম তালিকাবদ্ধ * তারা দলীয় পদ পদবী হারাবে, চরম নিগৃহিত হবে দুদকের
থাবায় * প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত সিদ্ধান্তে আপোষহীন থাকার ঘোষণা দিয়েছেন
শুধু মুজিবকোট পরিধান করে আর মুখে জাতির জনক শেখ মুজিবের বুলি আউড়িয়ে আড়াই সহস্রাধিক পেশাদার লুটেরাচক্র মাত্র ৫/৭ বছরেই হাজার কোটি টাকার মালিক বনেছেন। তারাই প্রভাবশালী দখলবাজ হয়ে উঠেছেন, দলীয় পদ পদবীও দখল করে নিয়েছেন। এমনকি নানা কৌশলে জনপ্রতিনিধিত্বও কব্জা করে নিয়েছেন। তাদের কাছেই সারাদেশের মানুষজন জিম্মী হয়ে পড়েছেন, তাদের আঙ্গুলি হেলনের কাছেই আটকে আছেন দলীয় ত্যাগী নেতা কর্মিরাও। প্রধানমন্ত্রীর নানা উন্নয়ন সুবিধাও তারা গোটা দেশে সমহারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। শুধু দলবাজ নেতারাই লুটেরা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন তা নয়, গোয়েন্দাদের তালিকায় আরো প্রায় ৭০০ জন সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকেও দেশ লুটেরা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিনি এসব দেশ লুটেরাদের ব্যাপারে কোনরকম আপোষ না করার ঘোষণা দিয়েছেন এমনকি তাদের পক্ষে সুপারিশকারী নেতা বা প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিন্ন শাস্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, হাইব্রীড বা কাউয়া টাইপের নব্য আওয়ামীলীগাররা মোটেও শেখ মুজিবের আদর্শে বিশ্বাসী নন, তারা এ আদর্শ অন্তরে লালনও করেন না। শুধুমাত্র অতীত অপরাধ অপকর্মের শাস্তি এড়াতে মুখে মুখে আওয়ামীলীগার হয়েছেন এবং তারাই দলের অতিদরদী হয়েও উঠেছেন। তাদের দ্বারাই প্রকৃত আওয়ামীলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী নেতা কর্মিরা উল্টো হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হচ্ছেন। দেশের বহুস্থানে হাইব্রিড আওয়ামীলীগাররই নানা কৌশলে এমপি, মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠজন হয়ে নেতা কর্মিদের শাসন শোষণ করে চলছেন। হাইব্রিডদেরই একটি অংশ সরাসরি অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন। বৈধ আয়ের সূত্র ছাড়াই রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া এমন কয়েক হাজার মানুষের বেপরোয়া কর্মকান্ড দেশ-সমাজের সর্বস্তরে অসম পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তাদের কারণেই ঘটে চলছে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা। সমাজে কোন্দল-সংঘাত, দলীয় পর্যায়ে জবর দখলদারিত্বসহ বেপরোয়া অপরাধ অপকর্ম এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও জটিলতা সৃষ্টি করছে তারা। ‘হঠাত কোটিপতি’দের একটি বড় অংশই দলীয় নানা পর্যায়ের নেতৃত্ব দখল করেছে, তারাই ছিনিয়ে নিয়েছে জনপ্রতিনিধির চেয়ারও। ফলে সর্বত্রই শাসন শোষণের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদকে রাতারাতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি করার দুর্ণিবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এর বিপরীতে অপরাধ অপকর্ম, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় বাধাহীনভাবে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত করার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে হঠাত বড়লোক বনে যাওয়া হাইব্রিড নেতাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকে পৃথক পৃথক নির্দেশ দেন। সংস্থাগুলোর তদন্তে উঠে আসে মাত্র ৫/৭ বছরের মধ্যে হাইব্রিড নেতাদের অন্তত ২৬০০ জন বনেছে হাজার কোটিপতি। পাশাপাশি দলবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যেও এ ধরনের ৭০০ কর্মকর্তার তালিকা প্রনয়ণ হয়। মোট ৩৩০০ জনকে ‘দেশ লুটেরা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রথম দফায় ১৭০০ জন হাইব্রিড নেতা ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এরমধ্যেই করোনার আঘাত হওয়ায় ওই নির্দেশনা স্থগিত হয়ে যায়। তবে এ মুহূর্তেই দেশ লুটেরাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করা যায় মর্মে আবার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। ফলে খুব শিগগির দেশ লুটেরা বিরোধী ‘দুর্যোগ অভিযান’ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে দেশ লুটেরাদের একটি তালিকা আবিস্কৃত হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশে হঠাত বড়লোক ‘দেশ লুটেরা’দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকাতেই অন্যদিকে দেশ লুটেরা সর্বনিম্ন তালিকাভুক্ত জেলা হচ্ছে খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়িতে সর্বমোট ১১ জন নেতা ও কর্মকর্তাকে ‘দেশ লুটেরা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এরমধ্যে খাগড়াছড়ি পশ্চিম জেলা এলাকার একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে শীর্ষ লুটেরা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুবলীগের অতি সাধারণ একজন সদস্য রাতারাতি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পরক্ষণেই শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার ঘটনায় রীতিমত অবাক বনে যান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জায়গা জমি বেশুমার জবর দখল, সরকারি প্রকল্পেও চাঁদা আরোপ, বিভিন্ন গোপন সংগঠনের নামে দেদারছে বখড়া আদায়ের অসংখ্য অভিযোগ উল্লেখ করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
শুধু খাগড়াছড়ি নয় সারাদেশে তালিকাভুক্ত লুটেরাদের অপরাধ অপকর্মের বিস্তারিত জানতে রিপোর্টারদের একটি টিম ইতিমধ্যেই মাঠে কাজ শুরু করেছে। অচিরেই তালিকাভুক্তদের বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে দৈনিক দেশবাংলায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।