
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি।
ঢাকার উত্তরায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া শীর্ষ প্রতারক আমির হামজা এ দেশের নাগরিক নন। তিনি মূলতঃ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। তাদের আদি নিবাস বার্মা বা মায়ানমার। দীর্ঘ দিন যাবৎ এই মহা প্রতারক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নেয়।
এই মহা প্রতারক আমির হামজা আলীকদমের বাদশা বলীর ছেলে। যে বাদশাও বার্মিজ নাগরিক।
প্রতারণার মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশীর অর্থ আত্মসাৎ, নারীদের শ্লীলতাহানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রতারক আমির হামজাকে ১২ জুলাই গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। তিনি রিয়েল সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠানটির এমডি সেজে প্রতারণা করে আসছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমির হামজার পিতার নাম বাদশা মিয়া। নব্বয়ের দশকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিক ছিল আমির হামজার বাবা বাদশা মিয়া। বর্তমানে আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বটতলী পাড়ায় তাদের বসত বাড়ি।
আমির হামজা ১৯৯৮ সালে প্রথম ঢাকায় যান চাকরির খোঁজে। এরপর একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে শুরু হয় তার কর্মজীবন।
পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করে ২০২০ সালে নিজেই একটি কোম্পানি খুলে বসেন। মূলত: এই কোম্পানির নামে আমির হামজার সাথে ‘সিরাজী’ ডাকনাম যুক্ত করে বিভিন্ন মানুষের সাথে নানা ধরনের প্রতারণা করতেন।
আমির হামজার পরিবার পার্বত্য আলীকদম উপজেলায় বার্মাইয়া পরিবার হিসেবে পরিচিত। আমির হামজা পড়ালেখা করেছেন মাত্র দশম শ্রেণি পর্যন্ত। দেশের প্রচলিত আইন ও কোম্পানি চালানোর নিয়ম কানুন কোনো টাই জানা ছিল না তার।
কোম্পানির লাইসেন্স থাকলেও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিরাপত্তা সদস্যদের হাতে ওয়াকি-টকি তুলে দিতেন তিনি। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না তার।
শুধু এখানেই শেষ নয়, চাকরির নামে বিভিন্ন জনকে ডেকে আনা হতো তার কোম্পানিতে। এরপর চাকরি দিয়ে চার হাজার করে টাকা আদায় করা হতো। পাশাপাশি নারীদের চাকরি দিয়ে নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন এই আমির হামজা সিরাজী। গত দুই বছর থেকে আমির হামজা ওরফে সিরাজী বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে নানা প্রতারণা করে আসছিলেন।
বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমির হামজার নেতৃত্বাধীন প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার বনরুপা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডে এ-ব্লকের ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ সময় তার কাছ থেকে চারটি ওয়াকিটকি সেট, তিনটি ওয়াকিটকি চার্জার, ১৬টি বিভিন্ন কালারের সিকিউরিটি গার্ড ইউনিফর্মের ব্যবহার্য প্যান্ট, দুটি ক্যাপ (রিয়েল ফোর্স), একটি মেটাল ডিটেকটর, একটি সিগন্যাল লাইট, ছয়টি বেল্ট, দুটি মোবাইল, তিন জোড়া বুট এবং ৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১ বলছে, এই আমির হামজা দীর্ঘ ২২ বছর বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানিতে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি নিজে একটি কোম্পানি খুলে বসেন। চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের আস্থাভাজনের জন্য খিলক্ষেত এলাকার অভিযোগ এলাকায় তার অফিস খুলেন। মূলত এই আমির হামজা ওরফে সিরাজ কোম্পানি খুলে নানা প্রতারণা করতেন।
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, আমির হামজা কোম্পানি খুলে নিয়মের বাইরে নিজে এবং তার কোম্পানি সদস্যরা ওয়াকিটকি ব্যবহার করতেন। যদিও এইসব যন্ত্র ব্যবহারে তার কোনো অনুমতিপত্র ছিল না, যা একটি অপরাধ।
এসব অভিযোগেই শীর্ষ প্রতারক আমির হামজাকে গ্রেফতার করে র্যাব।