
বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বরাবরই হামলা চালানো, মারধোর করা, আহত বানিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাপারে বড়ই সিদ্ধহস্ত। রাজাপুর ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষর উপর বহুল আলোচিত হামলা ঘটনার আগেও এই সংসদ সদস্যর সামনে তারই ঘনিষ্ঠজনরা আরেকজন অধ্যক্ষকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটিয়েছিল।
২০১৮ সালের ২০ আগস্ট এমপির সামনেই গোদাগাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। এমপি’র মারামারি প্রীতি সেখানেই শেষ নয়, তানোর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রবিন সরকারকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনাও ঘটে খোদ এমপি ফারুকের সামনেই। রবিনকে চাকরি না দিয়ে তানোর ছাত্রদলের সভাপতিকে চাকরি দেওয়ার প্রতিবাদ করায় রবিনকে পেটানো হয়।
একই বছর ১৮ আগস্ট রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং সাবেক আইজিপি মতিউর রহমান ও গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান। এমপির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এই দুই নেতার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট নেতারা থানায় মামলা পর্যন্ত করেন।
আরেক ঘটনায় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মণ্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানীর শোডাউনে হামলা চালায় ফারুক চৌধুরীর সমর্থকরা।
রাজশাহী ১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মারামারি ছাড়াও নিজ দলের নেতা কর্মিদের কোনঠাসা করা, হয়রানি চালানো, সরকারি কর্মকান্ডে অনিয়ম দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ রয়েছে। জিন্নাহ প্রেমী, টুপিধারী এমপি সাহেব নিজ দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে তিনি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের কাছে টেনে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছে দলের নেতাকর্মীরা। এর আগে দুজন মেয়রসহ সাত জন নেতা মিলে এমপি ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গোদাগাড়ীতে এখনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে। এমপি ফারুকের কাছের লোক এখন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি ফারুক রাজশাহীর নিউ মার্কেট এলাকায় বিলাসবহুল মার্কেট-কাম-আবাসিক ভবন নির্মাণ করছেন। প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে এই ভবনটি নির্মাণ করছেন তিনি। এই ভবন নির্মাণ নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। এই প্রাসাদেই গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। বলা হচ্ছে, এমপি ফারুক চৌধুরীর বেপরোয়া লাথি, কিল-ঘুসি ও হকিস্টিকের আঘাতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালসিটে পড়ে গেছে। তবে বিষয়টি ছড়াছড়ি হওয়ার পরে এমপি এবং আহত কলেজ শিক্ষক উভয়েই ঘটনাটি অস্বীকার করে একমঞ্চ থেকেই বক্তব্য দিয়েছেন।
অবশ্য এসব বিষয়ে এমপি ফারুক চৌধুরীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নির্দেশে কোনো হামলা হয়নি। মারধোরও করা হয়নি কাউকে। প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে থাকে।