
এম.এম মামুন, স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী :
রাজশাহীতে গত বছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ২৫ দিন। আর এবছর আষাঢ়ে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র আটদিন। গত বছর ৩৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা হয়েছে মাত্র ৩৯ দশমিক দুই মিলিমিটার। এতেই কমেছে প্রায় ৮৯ শতাংশ বৃষ্টিপাত। একই সাথে কমেছে বৃষ্টিস্নাত দিনের সংখ্যা।
রাজশাহীতে গত এক মাসে তাপমাত্রা ছিল গড়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তার আগের দিন ছিল ৩৮ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরো আষাঢ় মাসজুড়েই ছিল এমন তাপমাত্রা। আষাঢ় মাসের শেষ ১০ দিনে গুলো তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা গেছে, আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র আটদিন যা ৩৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে সেটাও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সময়ের জন্য। এ আটদিনের মধ্যে গত ১৮ জুন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ দশমিক ৯ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ জুন, ৯ দশমিক ১ মিলিমিটার। এরপর আর ৩ দশমিক ৬ মিলিমিটারের উপরে ওঠেনি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। ২৬ জুন এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়াও ১৭ জুন ও ২১ জুন দুই মিলিমিটার, ২৪ জুন ০ দশমিক ৪ মিলিমিটার, ৩০ জুন ০ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং ৩ জুলাই ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে গত বছরের চেয়ে এক আষাঢ় মাসেই বৃষ্টি কমেছে ৩১৪ দশমিক ৯৮ মিলিমিটার।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারি পর্যবেক্ষক কামাল উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এক ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বাড়ছে। গতবছর বৃষ্টিপাতের সময় তাপমাত্রা ছিল ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রির ঘরে। কিন্তু এই বছর বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা উঠানামা করেছে।
রাজশাহী আবহওয়া অফিসের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক গাউসুজ্জামান জানান, রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত অনেক কমেছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে। কেননা রাজশাহীতে যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার চেয়ে কাটা হচ্ছে বেশি। আবার নদীর নাব্যতাও কমেছে। সব মিলিয়ে জলবায়ুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়া আবহওয়ার খামখেয়ালিপনা বাড়ছে। তবে আশা করা যায় আগামী ১৯ জুলাইয়ের পর তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। বৃষ্টিপাতও হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৩৪ বছরে মার্চ থেকে জুলাই মাসে তাপপ্রবাহের সময়কাল ক্রমেই বেড়েছে। প্রতি মাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্যাহ আল মারুফ বলেন, রাজশাহী যে তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা উর্দ্ধমুখী। আমরা গবেষণা করে যেটা পেয়েছি তা হলো, প্রতিবছর দশমিক ০০৩ করে তাপমাত্রা বাড়ছে।
এই সহযোগী অধ্যাপক মনে করেন, রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ার কারণ জলাশয় ও পুকুর ভরাট, বৃক্ষ নিধন, বহুতল ভবন নির্মাণ। এজন্য রাজশাহীর তাপমাত্রা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
তিনি বলেন, তাপপ্রবাহ মোকাবেলা করার জন্য এখন থেকে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। আমাদের সবাইকে গাছ লাগিয়ে আবার গ্রীন বলয়ে ফিরে আসতে হবে। তা নাহলে এই অঞ্চলে প্রতিবছর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।