
এস এম হুমায়ুন কবির, রামু, কক্সবাজারঃ
রামু উপজেলা সদরের চৌমুহনী স্টেশনে নেমে রামু অফিসের চর ডাকবাংলোর নাম বললেই আপনাকে যে কেউ রাস্তা দেখিয়ে দেবে। দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে রাস্তার ডান পাশে চারপাশে শত শত মেহগনি আর কাঁঠালগাছে ঘেরা যে নীরব-নিস্তব্ধ ব্রিটিশ নকশার বাড়ি দেখবেন, হিরাম কক্সের বাংলো এটিই। পালংকী যাবেন? পালংকী এখন যে নামে পরিচিত, তা শুনলে নিঃসন্দেহে লাগেজ গোছাতে শুরু করবেন। দীর্ঘ দিন করোনায় বাড়ি বসে থাকতে থাকতে একেবারে অতিষ্ঠ। মন চাইছে নিশ্চয়ই সমুদ্রের কাছে যেতে ? অবশ্যই, পালংকী আপনার পছন্দের জায়গা হতে পারে।
আমরা আসলে প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের বালুকাময় কক্সবাজারের কথা বলছি। পালংকি কক্সবাজারের আদি নাম। কী করে তা কক্সবাজার হলো, সে কথা যেমন আপনাদের জানাব, তেমনি নিয়ে যাব কক্সবাজার থেকে ২৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে রামু উপজেলায়। এখানে আসতে হবে ইতিহাসের স্বার্থেই। যার নামে এখন কক্সবাজার, সেই হিরাম কক্সের বাংলো দেখলে আপনার মনের স্বাদ মিটে যাবে।
রামুর কয়েকজন ইতিহাস গবেষক জানান, পালংকীর ইতিহাস। ১৭৮৪ সালের আগে ভারতবর্ষ ও মিয়ানমারের মাঝখানে ছোট একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল, যার নাম আরাকান। এ সময় বর্মি রাজা বোধপায়া আরাকান দখলের জন্য অভিযানের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে যুবরাজ থাডো মিনসোকে।
বর্মি যুবরাজ থাডো মিনসো সহজেই পরাজিত করেন আরাকান অধিপতিকে। আরাকান দখল করার পর বর্মিরা রাখাইনদের অত্যাচার করতে লাগল। হাজার হাজার রাখাইন নাফ নদী পার হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন বর্তমানের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, কক্সবাজার, হারবাং এলাকায় আশ্রয় নেন । এই রাখাইন উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্যই ব্রিটিশ কূটনীতিক হিরাম কক্সকে পাঠানো হয়েছিল পালংকীতে। তাঁকে পালংকীর মহাপরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ক্যাপ্টেন কক্স এখানকার নানা সমস্যা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান, শরণার্থীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টা চালানোর সময়টাতেই তিনি ১৭৯৯ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি এখানে খুব জনপ্রিয় ছিলেন, তাই তাঁর মৃত্যুর পর পালংকীর মূল বাজারের নাম রাখা হয়েছিল কক্স সাহেবের বাজার।
হিরাম কক্সের জন্যই রামুতে তৈরি হয়েছিল বাংলোটি।
কেয়ারটেকার বয়োবৃদ্ধ বদিউজ্জামান জানান, হিরাম কক্সের বাংলোতে থাকা যায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে। স্রেফ চারশত টাকা ভাড়ায়।
বাংলোর ভেতরে বিশাল এক বারান্দা। এই বারান্দায় বসে অবসর সময় কাটাতেন হিরাম কক্স। বারান্দার ডান পাশের ঘরে দুটি কাঠের খানদানি খাট। একটি সংযুক্ত টয়লেট। বারান্দার বাঁ পাশের ঘরটি বড়। এই ঘরে আছে একটি খাট আর সোফা। বদিউজ্জামান দৈনিক দেশবাংলা কে জানান, সম্প্রতি জেলা পরিষদ থেকে এসব আসবাব দেওয়া হয়েছে।
হিরাম কক্সের সময়ের ভবনটি ছিল পুরো কাঠের তৈরি। জেলা পরিষদের মাধ্যমে নিয়মিত এই ভবনটি অবয়ব ঠিক রেখে সংস্কার করা হচ্ছে।হিরাম কক্সের সময়ে নির্মিত ডাকবাংলোর আসল কাঠের ভবনটির আদলেই বর্তমান ভবনটি।
ঐতিহাসিক বাড়িটি দারুণ অযত্ন ও অবহেলিত। ঐতিহাসিক বাড়িটি এখনো পর্যটকের কাছে তেমন পরিচিত নয়। পরিচিতি পাবে কী করে, এলাকার কোথাও কোনো পরিচিতি-সাইনবোর্ড নেই, কে জানবে এটা হচ্ছে ঐতিহাসিক সেই হিরাম কক্সের বাংলো, হিরাম কক্স যে বাংলোয় থাকতেন, কক্সবাজার যাঁর নামে নামকরণ হয়েছে।