
আবির হোসেন ,কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
খুলনার কয়রা সদরে সরকারি হাসপাতাল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত লাখো মানুষ।সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদ কয়রা উপজেলা জেলা শহর থেকে শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় আধুনিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া এ জনপদের মানুষের কাছে স্বপ্নের মত। সময়মত চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে তাদের প্রিয় স্বজনকে অসময়ে হারিয়েছে।
বারবার প্রাকৃতিক দূযোর্গে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় সহজে কেউ দূরে আমাদী ইউনিয়নে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে পারে না।এমনকি এ জনপদের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করায় সহজে কেউ জেলা শহরে গিয়ে ভাল চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়।
সুন্দরবনবেষ্টিত দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন থেকে উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এতদূর থেকে আমাদী ইউনিয়নে অবস্থিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা সেবা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় অনেক অসুস্থ্য মানুষকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে হয়।
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে জেলে ও বাওয়ালী আহত হলে তাদেরকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যার ফলে বাঘের আক্রমণে আহত অনেকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এ জনপদের মানুষ চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা সদর, মহারাজপুর ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কয়রা সদর আর এই প্রাণকেন্দ্রে একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।কয়রা সদরে স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ হলে উপজেলার মধ্য স্থানে হওয়ায় রোগীরা সহজে আসতে পারবে। সকল ইউনিয়ন থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব কমে যাবে। অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় সদরের রাস্তাঘাট ভাল হওয়ায় চলাচলে সুবিধা হবে।
কয়রা সদরে পাশে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন প্রতাপনগর। কয়রা সদরে পাশে অবস্থিত হওয়ায় তারা তাদের নিত্যদিনের পন্য ও চিকিৎসার জন্য কয়রা সদরের উপর নির্ভরশীল। কয়রা সদরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ হলে তারাও চিকিৎসার সুবিধা পাবে।
উপজেলা ৪নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা ধাত্রী নাজমা বেগম বলেন, অনেক দূরে হাসপাতাল হওয়ায় এলাকার গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে পারে না। প্রসবকালীন সময়ে অনেক দূর্ঘটনাও ঘটে অনেক নারীর মৃত্যু হয়েছে। কাছে হাসপাতাল থাকলে সবাই যেতে পারে তাই উপজেলা সদরে একটি সরকারি হাসপাতাল হলে ভাল হবে।
কয়রার সামাজিক সাংস্কৃতিক জাগরনে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলা এবং সমস্যা সংকটে বলিষ্ট কন্ঠস্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির সদস্য সাইফুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশে এরকম উপজেলা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে উপজেলা হেডকোয়ার্টার থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সময় বদলেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। এগিয়ে যাবে কয়রাও। আর কয়রাকে এগিয়ে নিতে এলাকার স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার বিকল্প নেই। পুরো উপজেলা বাসীর স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সহজ করতে উপজেলা সদরেই আধুনিক অধুনিক হাসপাতাল বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করা কয়রা উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবী।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস,এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রা সদরে একটি হাসপাতাল খুব জরুরি। এলাকার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন থেকে বর্তমান স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রায় ৩০ কিঃমিঃ দূরে হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশীর জনগন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা উপজেলা পরিষদ থেকে কয়রা সদরে একটি হাসপাতাল করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণেরর জন্য কাগজপত্র মন্ত্রাণলায়ে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু কাজের কোন অগ্রগতি নেই।
খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, কয়রা সদরে বিশ শয্যা হাসপাতাল করার জন্য মন্ত্রাণলায়ন থেকে অনুমোদন আছে, কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।