
মো: নিয়ামুল হাসান নিয়াজ:
আজ ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস । প্রতিবছর ন্যয় বিশ্বজুড়ে এই দিবস পালন করা হয়। মারাত্মক ও প্রাণঘাতী রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে এবং এই রোগে আক্রান্তদের সহায়তা করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য। বিশ্ব ক্যানসার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ক্যানসার সেবায় বৈষম্য দূর করি।
‘ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পুরো বিশ্বে এই দিবস পালন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি আগে ক্যানসারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এটির সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা। ১৭০টির বেশি দেশে এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখের বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিশেষত প্রতিবছর বিশ্বে সাড়ে ১০ কোটি নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আশঙ্কার খবর হলো, ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ ক্যান্সার ও তামাকবিরোধী জোটের সহযোগিতায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা এবং এই রোগের চিকিৎসার বিষয়ে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে ক্যানসার দ্রুত ধরা পড়ে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা দেওয়াও সহজ হয়।
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার আরও বলেন, ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। লক্ষণ নির্ভর করে ক্যানসার শরীরের কোথায় হয়েছে, এটি কতটা বড় হয়েছে এবং এটি কাছাকাছি থাকা কোনো অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করতে পেরেছে তার ওপর। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এর লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ক্যানসার নিয়ে দেশের মানুষের প্রচলিত একটি মনোভাব রয়েছে। তা হলো আমিতো সুস্থ, তাহলে আমি কেন চিকিৎসকের কাছে যাব?’ এই চিন্তা বিপদ ডেকে আনে। কেননা বিভিন্ন সময় গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসারে আক্রান্তদের বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটে রোগটি শুরুর দিকে শনাক্ত করতে না পারার কারণে।
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার আরও বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে তিন ধরনের ক্যানসারের রোগী বেশি দেখা যায়। সেগুলো হলো সার্ভিক্যাল বা জরায়ু মুখের ক্যানসার, ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এবং স্তন ক্যানসার। তাঁর মতে, দেশে নারীরা জরায়ু মুখের ক্যানসার ও স্তন ক্যানসারে বেশি মারা যাচ্ছেন। অথচ উন্নত বিশ্বে এই দুই ক্যানসারে মৃত্যুর হার শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কারণ, এই রোগ পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য।
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদারের মতে, ক্যানসারের লক্ষণ নির্ণয় করতে হলে সুস্থ অবস্থাতেই একজন মানুষকে হাসপাতালে আসতে হবে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের মানুষেরা আসেন একদম শেষ পর্যায়ে। তত দিনে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে তখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
এ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন: মজিবুল হক, অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য), স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী, সাবেক পরিচালক, বারডেম অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, সাবেক সভাপতি, ওজিএসবি অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, সম্পাদক, গাইনি অনকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডাঃ হালিদা হানুম আখতার, শিক্ষক, জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি। ডাঃ আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবেক পরিচালক, এনআইসিআরএইচ, অধ্যাপক ডা. কবি রোকেয়া ইসলাম, চেয়ারম্যান, প্রশিকা।
আলোচনায় সরকারের বিবেচনার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়: জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল দীর্ঘদিন যাবত অকার্যকর। দ্রুত পুনর্গঠন ও সচল করে ক্যান্সার বিষয়ক যে কোন প্রকল্প ও পরিকল্পনা এই পরিষদের মাধ্যমে একনেকে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়।
অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পাশাপাশি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী আলাদাভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। জাতীয় ক্যান্সার নিবন্ধন কর্মসূচীর আওতায় হাসপাতাল ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক নিবন্ধন চালু ও সম্প্রসারণ করতে হবে।
জাতীয় ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচী চালু করতে হবে চলমান অসম্পূর্ণ, ত্রুটিপূর্ন ও অসংগঠিত পদ্ধতির পরিবর্তে সমাজভিত্তিক সংগঠিত পদ্ধতিতে। হেপাটাইটিস ও এইচপিভি টিকাসহ ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে সরকারের সাথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে।