
গোদাগাড়ী ( রাজশাহী ) প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সমবায় অফিসের নিবন্ধন নিয়ে এনজিও গড়ে তুলে ঋণ কার্যক্রমের নামে চলছে রমরমা অবৈধ সুদের ব্যবসা। এদিকে ঋণের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে উপজেলার অসহায় দরিদ্র পরিবারগুলো। ঋণ কার্যক্রমের নামে অবৈধ সুদের ব্যবসা চললেও দেখার যেন কেউ নেই। প্রশাসন রয়েছে নিরব দর্শকের ভুমিকায়। সমবায় অফিসের নিবন্ধন নিয়ে গ্রীন, জননী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃসহ নানান নামে গড়ে উঠেছে শতাধিক এনজিও। আবার কোন কোন এনজিওর নেই সমবায়েরও নিবন্ধন। অথচ এনজির নাম করে তারা পেতে রেখেছে সুদের ব্যবসার ফাঁদ। এ ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অসহায় দরিদ্র পরিবার গুলো। এ সব এনজিও গুলোর নেই সমাজ সেবা , এনজিও ব্যুরো, এম আর অই নিবন্ধন। তারপও তারা দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণের নামে অবৈধ সুদের ব্যবসা।
কোন সমিতি সমবায় থেকে নিবন্ধন নিয়ে সমিতির সদস্যদের মাঝে ঋণ কার্যক্রম চালানোর অনুমতি থাকলেও বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ সব এনজিওর নামে সুদের ব্যবসায়ীদের টার্গেট এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষ গুলো। এনজিওর নামে সুদের ব্যবসাযীরা সমিতির শেয়ার বিক্রি না করে শুধু শুধুমাত্র সঞ্চয় জমা নিয়ে এলাকার সহজ সরল মানুষদের মাঝে দিচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ।
জামানতের নামে ব্যাংক চেকের পাতা নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে গ্রীন ও জননী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ নামের প্রতিষ্ঠান দুটি সমবায় থেকে নিবন্ধন (১১৭৬/২০১৭)ও(১২৭৪/২০১৮) নিয়ে ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে বাসুদেবপুর, মোহনপুর, গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কিছু ইউনিয়নব্যাপী। যদিও বা অনুমোদন আছে গোদাগাড়ী উপজেলার দুই ইউনিয়ন ব্যাপী সভ্য সদস্যদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবসা পরিচালনা করান। দরিদ্র নারী-পুরুষদের ঋণ দিচ্ছে সমিতি দুটি। সমিতির সদস্যদের কাছে শেয়ার বিক্রয় না করে শুধুমাত্র সঞ্চয় জমা নিয়ে এলাকার সহজ সরল মানুষদের মাঝে দিচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ। যে ঋণ গ্রাহকরা দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ১৫% সুদ সহ কিস্তির মাধ্যমে মুলধন পরিশোধ করছে। যা সমবায়ের আইন অনুযায়ী ১০% এর বেশি সুদ নিতে পারবেনা, সমবায় আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ডিপিয়েসের নামে করছে আমানত সংগ্রহ।
লস্করহাটী গ্রামের একজন ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহিতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি ওদের কাছ থেকে ঋণ নিলাম। তারা বলে সব সমিতি এক রকম লাভ নেয়। বলে আমরা তোমাদের নিজেদের এলাকার সমিতি। আমাদের কাছ থেকে লোন নিলে সুদ কম নিবো। আসলে সব সমিতি এক রকম সুদ নেয়। অন্যান্য সমিতি চেক নেয় না। কিন্তু এলাকার সমিতি গ্রীন নেয়।
জননী সমবায় সমিতি লিঃ এর অফিসে গিয়ে অনিয়ম বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার হাতে সময় নেয় আমি মাঠে কালেকশনের উদ্দেশ্যে বের হবো, আপনার যা জানার সমবায় অফিসে গিয়ে জানেন সমবায় অফিস ম্যানেজ করে আমরা ব্যবসা করছি!!
এদিকে গ্রীন স.স.লি. সভাপতি মো. তরিকুল ইসলামের কাছে অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সমবায় অফিসার ম্যানেজ করে আমরা ব্যবসা করছি আপনাদের যা করার আপনারা করতে পারেন। ‘আমাদের ঋণ দেওয়ার আইন আছে। সমবায় সমিতিরা ঋণ দিতে পারে। আগে বুঝতে হবে, এটি হলো সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি। ঋণ দেয়া যায় আমরা এমনি এমনি ঋণ দেই না। সঞ্চয় জমা নিয়ে তারপর ঋণ দেই। তবে টাকা আদায়ের স্বার্থে আমাদের অনেক কিছু করা লাগে। অনেক টাকা অনাদায়ী হয়। এ কারণে সুদের মাত্রাটা একটু বেশি থাকে। বোঝেনতো, সমিতি চালাতে গেলে অনেক খরচ লাগে।’
এই বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো.জিগার এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গোদাগাড়ীতে নতুন এসেছি , তবে সমবায় থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত সমিতি কোন সদস্যের কাছে থেকে ব্যাংক চেক জমা রেখে ঋণ দিতে পারে না। তাছাড়া শেয়ার ক্রয় না করলে সে সমিতির সদস্য হতে পারে না এবং তাকে ঋণ দেয়া যায় না এবং নিজ কর্ম এলাকার বাইরে কাওকে সদস্য করা যাবেনা। যদি কোন সমিতি সমবায় আইনের বাইরে কিছু করে থাকে বা আইন বহির্ভূত কাজ করে তাহলে তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।