

গাজীপুর প্রতিনিধি:
ঈদযাত্রার শেষ মুহুর্তে ঘরে ফেরা মানুষদের মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছেন টেক্সটাইল শ্রমিক। বেশিরভাগ টেক্সটাইল কারখানা শুক্রবার রাতের শিফটশেষে ছুটি হয়েছে। শনিবার ভোর থেকেই বাস ও ট্রেনে উপচেপড়া ভীড় ঠেলে তারা গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করছেন।
শনিবারও সড়কপথে পরিবহন কম থাকায় অনেকেই ট্রেনে চেপে স্বজনদের কাছে ফিরছেন। ট্রেনের বিভিন্ন কোচের ভেতর, বাহির ও ছাদে উপচেপড়া মানুষ ঢাকা, বিমানবন্দর, টঙ্গী থেকে জায়গা দখল করায় গাজীপুরের স্থানীয় রেলস্টেশনগুলোতে অপেক্ষমান বেশিরভাগ যাত্রীরা উঠতে পারছেন না।
খাদিজা আক্তার (২১) শ্রীপুর পৌরসভার ইকো টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের শ্রমিক। তিনি বলেন, অন্যান্য কারখানার অনেক সহকর্মী দু’দিন আগে ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে গেছেন। আমাদের কারখানা শুক্রবার রাতের শিফট ডিউটি করিয়ে শনিবার ভোরে ছুটি দিয়েছে। জামালপুর যেতে সড়কপথে ট্রাক-পিকাপ ছাড়া পর্যাপ্ত গণ পরিবহন পাইনি। দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও কোনোটি গেইটলক করে যাচ্ছে আবার কোনোটি চারগুণ ভাড়া দাবী করছে। উপায়ন্তর না দেখে শ্রীপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছি।
অপর টেক্সটাইল শ্রমিক জামালপুরের শফিকুল ইসলাম বলেন, তারা চারজন শ্রীপুরের বিভিন্ন টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কারও শুক্রবার দিনের শিফটশেষে আবার কারও রাতের শিফটশেষে ছুটি হয়েছে। একই এলাকার হওয়ায় সবাই একসাথে রওয়ানা হয়েছেন বাড়ির উদ্দেশে। সড়কপথে পর্যাপ্ত গণপরিবহন পাওয়া যায়নি। ট্রাক-পিকাপেরও দ্বিগুণ ভাড়ায় যাত্রী আনা নেওয়া করছে। শ্রীপুর রেলস্টেশনে অসংখ্য মানুষ ট্রেনে উঠতে পারছেন না। বিশেষ করে যাদের সাথে স্বজন, নারী-শিশু এবং বয়োবৃদ্ধ মানুষ রয়েছেন তারা কোনোভাবেই ট্রেনে উঠতে পারছেন না। মানুষের জন্য ট্রেনের কোচগুলোর গেইট, হাতল, ছাদের শেড কিছুই দেখা যায় না। বাদুর ঝুলা হয়েও অনেক মানুষ ট্রেনে চড়ছেন। মানুষ আর মানুষ ট্রেনের আগাগোড়া ঢেকে ফেলেছে।
শ্রীপুর পৌরসভার আরমাদা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের কর্মী সাদিয়া আক্তার (২৩) বলেন, বাড়িমুখী (জামালপুর) সকল পরিবহনের প্রচন্ড ভীড়। অঅগামীকাল রোববার ঈদুল আযহা। শেষপর্যন্ত বাড়ি যেতে পারব, না কি ফিরে যেতে হবে শঙ্কায় রয়েছি।জামালপুর জেলার নরুন্দি থেকে হাবুল মিয়া (৬০) সপ্তাহদুয়েক আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সিএন্ডবি এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে সস্ত্রীক বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে দেখেছি সড়কে পরিবহন সংকট, দু’দিন আগে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে ফিরে গেছি। ভেবেছিলাম ঈদের আগেরদিন গণপরিবহন ট্রেনে স্বাভাবিক যাতায়তা করতে পারব। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সড়কে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জামালপুরের বাস পাইনি। তবে সড়কে ট্রাক-পিকাপ রয়েছে পর্যাপ্ত। যে বয়স তাতে ট্রাক-পিকাপে চড়ার সাহস পাইনি। অবশেষে শ্রীপুর রেলস্টেশন এসে বলাকা কমিউটার এক্সপ্রেস এবং জামালপুর কমিউটার এক্সপ্রেস দুটি ট্রেনই মিস করলাম। প্রচন্ড ভীড়। শক্তি সামর্থ্যবান মানুষ নিজের জান (প্রাণ) নিয়ে উঠতে পারেনি আর আমরাতো বুড়া-বুড়ি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে চলাচলকারী অভি পরিবহনের চালক ফয়েজ সিকদার জানান, ঢাকা থেকে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের বাইপাইল এবং চন্দ্রার কাছে ওয়ালটন কারখানা এলাকায় কিছুটা যানজট রয়েছে। তাছাড়া ওই সড়কের প্রায় পুরোটাই শনিবার সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শনিবার সকাল থেকে এ পর্যন্ত যানজট নেই। যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহন কম। ঘন্টায় ১৫ থেকে ২০টি গণপরিবহন চোখে পড়ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আলম মামুন জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে গাজীপুরের মহাসড়কে যাত্রী ও গণপরিবহনের সবশেষ চাপ বয়ে গেছে। এখন মহাসড়কগুলো বলতে গেলে অনেকটাই ফাঁকা। যান চলাচল স্বাভাবিক।