
ইসমাইল চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শনিবার (১৩ মে) রাত ৮ টার দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছনুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী। এসময় স্থানীয়রা এলাকার অতিঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবী জানান।
পরিদর্শনকালে ইউএনও আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে অবস্থানরত লোকজনদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এসময় ইউএনও’র সাথে ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ চট্টগ্রাম কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক আবু ছৈয়দ মোহাম্মদ মুজিব, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন ও ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময়ও বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছিল ছনুয়া এলাকার ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর, টিউবওয়েল ও ফসলসহ শতকোটি টাকার সম্পত্তি। সিত্রাং এর ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই দরজায় কড়া নাড়ছে প্রবলবেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মোখা। এলাকাবাসী দাবি, দ্রুত যাতে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি সংস্কার করা হয়।
ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান অতি ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সিত্রাংয়ের সময় সেসব অংশ দিয়ে সাগর থেকে পানি ঢুকে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছি। চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ বলেন, এলাকার ২৭ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫ হাজার লোকজন আশ্রয় নিয়েছে এবং ১৫ হাজার লোকজন এলাকা ছেড়ে আশেপাশের ইউনিয়নে চলে গেছে। লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র এবং গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। আমার ইউনিয়নে বাঁধের অতি ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো গতকাল থেকে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সংস্কারের চেষ্টা করছেন। আজও ইউপি সদস্যরা স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করছেন। আমরা মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ রয়েছে মোট ২৫০ কি.মি। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৭ কি.মি. অরক্ষিত (ঝুকিপূর্ণ ও অতি ঝুকিপূর্ণ)। বাঁশখালীতে ৩৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১.২ কি.মি. ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ হল খানখানাবাদ ও ছনুয়া ইউনিয়ন এলাকায়।
ইতিমধ্যে কক্সবাজারে জারি করা হয়েছে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রামে ৮ নম্বর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করে কক্সবাজারের দিকে এগিয়ে আসলেও চট্টগ্রামেও পড়বে ‘মোখা’র শক্তিশালী প্রভাব। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে আনোয়ারা, বাঁশখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ডের অবস্থান উপকূলীয় এলাকায়। ঘূর্ণিঝড় মোখা’র সম্ভাব্য আক্রমণস্থল টেকনাফের সবচেয়ে কাছেই রয়েছে বাঁশখালী উপজেলা। তাই ঘূর্ণিঝড় মোখা’কে ঘিরে উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের ছনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা।