
আল-আমিন, ঘোড়াঘাট জামালপুর থেকে ফিরে:
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকেই জামালপুর সদর উপজেলার তুলসীপুরে বসছে বিরাট আকারের ঘোড়ার হাট। সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের এ হাটে আমদানী হয় শতাধিক ঘোড়া। ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে বেচাকেনা হয় ঘোড়াগাড়ি ও লাগামসহ নানা সরঞ্জাম।
দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে লাল, সাদাসহ নানারংয়ের ঘোড়া ও ঘোড়ার বাচ্চা নিয়ে এ বাজারে আসেন মালিক ও ঘোড়সোওয়াররা।
শেরপুর , টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বগুড়া , কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নড়াইল ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার ও ঘোড়সওয়ার এ হাট থেকে ট্রায়াল দিয়ে পছন্দের ঘোড়াটি কিনে নেন। বিশেষ করে তরুণ ঘোড়সওয়াররা শখের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য চড়া দামে কিনে নেন আকর্ষনীয় তেজি ঘোড়া ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম জানান- দীর্ঘ ৫০ বছর যাবৎ চলা এই ঘোড়ারহাটে ৩ হাজার থেকে ৬০ ও ৭০ হাজার টাকার ঘোড়া পাওয়া যায়। দেশের নানা জায়গা থেকে এমনকি কখনো বিভিন্ন প্রবাসীরাও ভিডিও কলের মাধ্যমে এই হাট থেকে ঘোড়া কিনে থাকে। এই জায়গায় ঘোড়াছাড়াও ৩ হাজার থেকে ৬ হাজারটাকা ঘোড়ারগাড়িও পাওয়া যায়।এটি খুব ঐতিহ্যবাহী একটি হাট।
দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ ঘোড়াব্যবসায়ী টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার মো: রুহুল আমিন বলেন-“এই বাজারে অনেক ভালো-ভালো ঘোড়া পাওয়া যায়। তাই এই খানে আমরা বারবার আসি। দেশের অন্য কোনো জায়গায় আমি আর ঘোড়ারহাট দেখিনাই। এই হাটে দেশী, তাজী, ভুইটা, ক্রস এমনকি গাধাসাইজের ঘোড়াও এই হাটে পাওয়া যায়।”
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা থেকে আসা ঘোড়া ক্রেতা মোহাম্মদ হেলাল বলেন-“আমি সিরাজগঞ্জ থাইকে আসি ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনছি। এহন এই রাইতের বেলা আমার সিরাজগঞ্জ যাওয়া লাগবো। যদি থাকার এডা জায়গা থাকতো । তাইলে রাইতটে থাইকে কাইলকে সকালে যাইতাম। এহন কষ্ট হইলেও রাইতের বেলায় বাড়িত যাওন লাগবো।”
ঘোড়া ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন-“এই ঘোড়ার হাটে ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা নিয়ে ঘোড়া কিনতে আসে। তাদের একটা নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে। এই জায়গায় কোনো নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসে। তাদের থাকা খাওয়া এমনকি বসার কোনো জায়গা নাই। এসব কারনে দিন দিন ঘোড়া বিক্রি কমে যাচ্ছে। তাই এসব বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।”
ঘোড়ার হাটের ইজাড়াদারের একজন মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস বলেন- “মৌসুমে এই হাটে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘোড়া বেচা কেনা হয়ছে। করোনার জন্য এখন তেমন একটা বেচা কেনা নাই। সামনে বেচা কেনা বাড়তে পারে। তবে এই হাটে যদি উপজেলা প্রশাসন ক্রেতাদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আরো ভালো বিক্রি হতো।”
এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান মুঠো ফোনে বলেন- ঘোড়া ব্যবসায়ী বা ইজাড়াদার কেউ এখন পর্যন্ত এসব বিষয় নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলেনি। তবুও তাদের সাথে কথা বলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো। ঘোড়ার হাটকে আরো সমৃদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে।
এছাড়াও এই হাটে ঘোড়া দেখতে ভীর জমায় অনেকে।