

চট্টগ্রাম ব্যুরো:
কখনো সাতকানিয়ার ভোটার হিসেবে নাগরিক আবার কখনো বান্দরবান জেলার নাগরিক হিসেবে দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করাই যাঁর কাজ সে হলো সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের তেমুহনি ফকিরবাড়ি এলাকার স্হায়ী বাসিন্দা মৃত আসহাব মিয়ার ছেলে মোঃ সেলিম উদ্দীন।
মো. সেলিম উদ্দীন জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে রাতারাতি বনে গেলেন বান্দরবান জেলার নাগরিক। বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বান্দরবান সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর দেওয়া এক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়।
কেবল তথ্য প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে এনআইডি জালিয়াতি করতে পারলেও নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তার জাল এনআইডি রেকর্ড হয়নি। তবে বান্দরবান পৌরসভা থেকে অনলাইনে রেকর্ডকৃত একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছেন তিনি। সেলিম উদ্দীন সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের তেমুহনি ফকিরবাড়ি এলাকার মৃত আসহাব মিয়ার ছেলে। নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে এই ঠিকানায় তার জাতীয় পরিচয়পত্র রেকর্ড আছে। তবে জাল এনআইডিতে তিনি বান্দরবান মৌজার ৩১৩ নং বনরুপা পাড়ার ঠিকানা ব্যবহার করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন আইন ১৯০০ মোতাবেক বান্দরবান জেলায় স্থায়ী নাগরিক ছাড়া কেউ জমি ক্রয় করতে পারেনা। সেলিম উদ্দীন মূলত জমি ক্রয় করার উদ্দেশ্যেই এনআইডি এবং জন্ম সনদ জাল করেন। গত ১৩/১০/২০২০ ইং তারিখে জাল এনআইডি ব্যবহার করে ৮১০/২০২০ নং মূলে একটি জমি বিক্রয়ের বায়নানামাও করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সেলিম উদ্দীন মূল এনআইডি নাম্বার ৯১৫৮২৫৫৬৮৮ বদলীয়ে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে একটি জাল এনআইডি তৈরি করেন। যার নাম্বার ০৩২১৪১৬২৬০০০৮ ও জন্ম তারিখ ১১/০৬/১৯৭৩। মূল এনআইডি এবং জাল এনআইডির মধ্যে জন্ম তারিখ ও পিতা মাতার নাম মিল রেখে বাকি সব তথ্য জাল করা হয়। এছাড়া বান্দরবান পৌরসভার জন্ম সনদেও (নং- ১৯৭৩০৩২৫০০৬১১৭১৮৪) জন্ম তারিখ ও পিতা মাতার নাম মিল রেখে ব্যবহৃত ঠিকানা সরাসরি জন্মস্থান বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সেলিম উদ্দীন বান্দরবান বোমাং রাজার জাল সনদ তৈরি করেন।
নির্ভরযোগ্য তথ্য মতে, ২৮৪ নং ইয়াংছা মৌজার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুর রশিদের ছেলে আসহাব মিয়া। বিগত ২৪-২৫ বছর আগে সে মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু সেলিম উদ্দীন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পিতার নাম ব্যবহার করে বনে যান বান্দরবানের নাগরিক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হেডম্যান কার্যালয় গত ২ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেওচিয়ায় বসবাসকারী সেলিম উদ্দীনের পিতা আসহাব মিয়ার অত্র মৌজায় কোন জমিজমা নেই। এসব বিষয়ে জানতে সেলিম উদ্দীনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, বান্দরবানে যারা জমি ক্রয় করে তারা সবাই এভাবেই করে। আর সাংবাদিকরা ফোন দিয়ে টাকা চায়। কে কে টাকা চেয়েছে জানতে চাইলে বলেন, আপনিও চেয়েছেন। প্রমাণ দেন, আপনার ফোন কল রেকর্ড করা হচ্ছে বললে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুল ইসলাম বলেন, এনআইডি জালিয়াতি সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের কাজ চলমান। তদন্ত সাপেক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবিকে ফোন করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৌরভ দাশ বলেন, বান্দরবানে এনআইডি কিংবা জন্মসনদ দিয়ে জমি ক্রয় করা সম্ভব না। আনুষাঙ্গিক অনেক কাগজ পত্রের দরকার পড়ে। তারপরেও কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার এলাকা থেকে জন্মসনদ নিয়ে থাকে, সেটা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে আমরা ঐ জন্মসনদ বাতিল করে দিব।
বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) সাজিয়া আফরোজ বলেন, অভিযোগটি পাওয়া মাত্রই আমরা তদন্তে পাঠিয়েছি। তদন্তে যদি ঐ ব্যক্তির দোষ প্রমানিত হয় তাহলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।