
আন্তর্জাতিক:
দুর্নীতির অভিযোগের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। একে একে পদত্যাগ করছেন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে অন্তত চারজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। সামনের দিনগুলোতে সরে যেতে পারেন আরও অনেকেই।
ইউরোপের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি ইউক্রেন। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশটির দুর্বল শাসনব্যবস্থা বরাবরই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় জয়ের পর জেলেনস্কি ইউক্রেনের শাসনব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নানা মহলে।
২০২১ সালে ইউক্রেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির তালিকায় বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১২২ তম স্থান দখল করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের সদস্যপদের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে দুর্নীতি নির্মূল করাকে অন্যতম শর্ত দিয়ে রেখেছে।
সম্প্রতি দেশটির রাজনীতিক ও সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও অনিয়ম ও দুর্নীতি থেমে নেই। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে বিপুল পরিমাণে দুর্নীতি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এর মধ্যেই দেশটির এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে খাদ্যদ্রব্য মজুত করে রেখে উচ্চমূল্যে বিক্রির জন্য চুক্তির অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ওই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন জেলেনস্কি। গত রোববার (২২ জানুয়ারি) কিয়েভের প্রতিরক্ষা দফতর থেকে ওই তদন্ত করা হয়। তদন্তে জেলেনস্কির প্রশাসনের ভেতরে দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে।
এরপর এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শামিহাল জানান, দেশটির সম্প্রদায়, অঞ্চল এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উপমন্ত্রী ভ্যাসিল লোজিনস্কিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রয়টার্স জানায়, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে আটক হন লোজিনস্কি।
এ ঘটনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জেলেনস্কি। গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুদ্ধের আড়ালে দেশটিতে ব্যাপকহারে দুর্নীতি চলছে, যা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। শিগগিরই দুর্নীতিকে সমূলে বিনাশ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও তিন শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ
ইউএস নিউজের প্রতিবেদন মতে, মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) আরও অন্তত তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করা ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ডেপুটি প্রসিকিউটর জেনারেল, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপপ্রধান ও উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
রয়টার্স জানিয়েছে, সবশেষ জেলেনস্কির অন্যতম শীর্ষ উপদেষ্টা কিরিলো তিমোশেঙ্কো পদত্যাগ করেছেন। তিমোশেঙ্কো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপ-প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পদত্যাগের সময় তিনি জেলেনস্কিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তাকে ‘প্রতিদিন ও প্রতি মুহূর্তে ভালো কাজ করার সুযোগ’ দিয়েছেন।
তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। দামি গাড়ি ব্যবহারের জন্যই মূলত এই অভিযোগ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। আগামী দিনগুলোতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আরও রদবদল আসবে, ইতোমধ্যে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন জেলেনস্কি।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তার এক ভিডিও বক্তব্যে বলেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকার, আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রদবদল করবেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তনের বিষয়টির সঙ্গে দুর্নীতি দমনের যোগসূত্র রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মত প্রকাশ করেছেন।
এদিকে জেলেনস্কির দল ‘সারভেন্ট অব দ্যা পিপল পার্টির’ প্রধান ডেভিড আরাখামিয়া অঙ্গীকার করেছেন, দুর্নিতীগ্রস্থ কর্মকর্তাদের কারাদণ্ড দেয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধে মনোযোগ দিন, ভুক্তভোগীদের সহায়তা করুন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমান এবং সন্দেহজনক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বন্ধ করুন। অনেকে এই বার্তা শুনেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেকে শোনেননি’।
সমালোচনার মুখে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভও
অনিয়মের কারণে সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভও। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মতে, তিনি অতিরিক্ত দামে সামরিক বাহিনীর জন্য খাবার কেনার চুক্তিতে সাক্ষর করেছেন। তবে রেজনিকভ দাবি করেছেন, এই উচ্চ মূল্য একটি ‘কারিগরি ভুল’।
এদিকে ইউক্রেনের সংবাদপত্র ইউক্রেনস্কা প্রাভদা জানিয়েছে, তিমোশেঙ্কোর সংযোগ থাকার কারণে সুমি, নিপ্রো, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন-এই চার আঞ্চলিক প্রধানকে বরখাস্ত করা হতে পারে।