

সোহেল সামিঃ
গাড়ি দু’টোর গ্লাসে ডক্টর লেখা, ইউটার্ন নিয়ে গ্রিনলাইফ হাসপাতালে ঢুকছে। শুধু ডাক্তার কেন, রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স, দর্শনার্থীদের গাড়ি, সিএনজি, পিকআপ, এমনকি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের মোটরসাইকেল, সারাদিন কত রকমের গাড়ি যে এই হাসপাতালে আসা যাওয়া করে, তার ইয়ত্তা নাই। হাসপাতালটি যেমন নাম করা, ব্যাস্ততাও তার বেশি। গাড়িগুলো যেন নির্বিঘ্নে হাসপাতালে ঢুকতে ও বেরুতে পারে, তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোটা দশেক লোক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। নেভিব্লু’র ওপর সাদা হাতা ড্রেস পড়ে পালাক্রমে তারা দিনরাত রোডটির ওপর সেলফ ট্রাফিকিংয়ের গুরুদায়িত্ব পালন করে। রাজধানীর অভিজাত হোটেল, বড়ো বড়ো শপিংমল, নামকরা হাসপাতাল, কাদের নেই এই সেল্ফ ট্রাফিকিং ব্যাবস্থা!
গ্রিনরোডের গ্রিলাইফ হাসপাতালের সামনে আটকে আছি। হাসপাতালের ভেতর থেকে কোন গাড়ির মাথা উঁকি দিলেই দুই তিন জন ট্রাফিক দৌড়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। গাড়িটি যে দিকে যাবে, একজন তার বিপরিত পাশের গাড়িগুলো দু’হাত প্রসারিত করে আটকে দিচ্ছে, আরেকজন অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি (যাই থাকুক) বাঁশি বাজিয়ে ক্লিয়ার করছে, বাকি জন হাসপাতাল থেকে সদ্যবেরুনো গাড়িটির সাথে কিছুদূর গিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসছে। গ্রিন রোডের যে স্থানটিতে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সড়ক বিভাগ সেখানে কোন ইউটার্ন রাখে নাই। তাতে কি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেল্ফ ট্রাফিকিংয়ের সুবিধার্থে, সেল্ফ ইউটার্নের ব্যাবস্থাও করে নিয়েছে। রাস্তার প্রায় ১০/১২ ফুট ডিভাইডার কেটে কম বেশি ডায়ার দুটো পাইপের সমন্নয়ে অভিনব কায়দায় রাস্তার মাঝ বরাবর খোলা ও বন্ধ করার ব্যাবস্থা করে নিয়েছে। সেটি অপারেট করার জন্য যথারীতি একজন ট্রাফিককেও রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। অপর পাশ দিয়ে কোন গাড়ি আসলেই, একটি পাইপের ভেতর আরেকটি পাইপ ঢুকিয়ে রাস্তা খুলে দেওয়া হয়, গাড়িগুলো নির্দিধায় ইউটার্ন নিয়ে হসপিটালে যায়, বেরোয়। আর এই সময়টিতে রাস্তার উভয় পাশের গাড়িগুলোকে আটকে দাড়িয়ে যায় আরো দুজন। ফলে, জ্যামলাগে, গাড়ির লাইন হয়, ১০/১৫ মিনিট, কখনো তারও বেশি সময় ধরে দাড়িয়ে থাকতে হয়। আর একবার বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লে তো কোন কথাই নাই, আধাঘন্টায়ও জ্যাম ছাড়ে না। ঠিক এরকমই একটি জ্যামে আটকে আছি।
ছবিটি যখন তুলছি, তখন রাত ১০ টা। টিপটিপ বৃষ্টি। যথারীতি গ্রিন লাইফের ট্রাফিকিং চলছে। পাশেই একজন পুলিশের ড্রেস পড়ে দাড়িয়ে। ট্রাফিক সার্জেন্ট হবে হয়তো। সে ও এই রাস্তারই দায়িত্ব পালন করছে, মিলে মিশে। জ্যাম ছাড়লে, সামনে এগুলাম, গন্তব্য সাইন্সল্যাব। রিক্সায় কোন প্রটেকশনের ব্যাবস্থা না থাকায়, অর্ধেক ভিজে গেছি। সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে এসে দেখি একই অবস্থা, তারাও নিজ উদ্যোগে ট্রাফিক নিয়োগ দিয়ে, গাড়ি আনা নেওয়া করছে, যথারীতি রাস্তার দুইপাশের গাড়িগুলো আটকে দিয়ে। একেতো বৃষ্টি, তার ওপর গুমোট গরম। একটা রিক্সা পার হয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই, ধরাম করে তার ওপর বাড়ি। কারো কথায় কান দেওয়ার সুযোগ কই, নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, নিষ্ঠার সাথে পালনে মহা ব্যাস্ত মহোদয়েরা। গেলো আরো ১০ মিনিট। মুক্ত হয়ে কিছুদূর এগুতেই চোখে পড়লো বিশাল এক জ্যাম। রিক্সাওয়ালা জানালো, এটি ল্যাব এইডের ট্রাফিকিং। ভাড়া চুকিয়ে নেমে পড়লাম। সিদ্ধান্ত নিলাম সামনের পথটুকু হেঁটেই যাবো। হাটছি আর ভাবছি, এই যে জায়গায় জায়গায় সেল্ফ ট্রাফিকিং, এর কি কোন রাষ্ট্রীয় অনুমতি আছে? আছে হয়তো, তা না হলে, এমন নির্বিঘ্নে, দাপটের সাথে চালায় কিভাবে? আবার ভাবছি, জনগণের বিপদ হয়, সময়ের অপচয় হয়, এমন অনুমোদন রাষ্ট্র দেয় কিভাবে? আমি আসলে জানি না, অনুমতি আছে কি নাই। এও জানিনা, গাড়িগুলোর এন্ট্রি কিংবা এক্সিটের জন্য যথেষ্ট জায়গা না রেখে, রাস্তার ধারে এত বড় প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রাজউক কিভাবে দেয়। তবে এটা জানলাম, জায়গায় জায়গায় এই সেল্ফ ট্রাফিকিং না থাকলে, এর অর্ধেক সময়ে গ্রিন রোড পার হতে পারতাম।