
এস.এম.মনির হোসেন জীবন:
রাজধানী তুরাগের চন্ডালভোগ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মোস্তফা কামাল সুমনের বাসায় চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে তালা কাটা দুই চোর।
আটককৃত চোর দলের সদস্যরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার শহীদুল (২৭) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউতলি থানার মাসুদ (২৫)। এ সময় বাড়ির মালিক সুমন ও তার ভাই রুমন তাদের নিকট থেকে চুরির কাজে ব্যবহৃত ছুড়ি, কাটার, স্ক্রু ড্রাইভার, ইনজেকশনের সিরিজ, ইয়াবা খাওয়ার ফুয়েল, তালা কাটার যন্ত্রসহ আরও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়। দুই চোর আটকের খবর তখন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দা ও উৎসুক জনতা সুমনের বাড়িতে তথা ঘটনাস্থলে জড়ো হতে থাকে।
বুধবার দিবাগত রাতে তুরাগের চন্ডালভোগ গ্রামে এ চুরির ঘটনাটি ঘটে।
এলাকাবাসি ও বাড়ির মালিক মোস্তফা কামাল সুমন দৈনিক দেশ বাংলাকে জানান, এর আগে বিষয়টি তুরাগ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসানকে জানানো হলেও প্রায় এক ঘন্টা পর ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে আসা উপ- পরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল তার সাথে তিন পুলিশ সদস্যকে চুরির কাজে ব্যবহৃত উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিয়ে চোরদের তাদের হেফাজতে দিতে চাইলে তিনি উল্টো ঘটনাস্থলে থাকা লোকজনের উপর হঠাৎ করে চড়াও হন এবং ক্ষেপে যায়। তখন ঘটনাস্হলে উপস্হিত প্রায় শতাধিক লোক পুলিশের এমন আচরণে অনেকের মন ভেঙে যায় এবং হতাশা প্রকাশ করেন।
ঘটনাস্হলে আসা এসআই মোজাম্মেল ওই বাড়ির মালিক সুমনকে জানান, আগে থানায় গিয়ে মামলা করতে হবে। এরপর চোরদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে, নয় গ্রেফতার করা যাবে না। তাদেরকে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিতে হবে বলে পরামর্শ দেন।
হাতে নাতে চুরির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সহ ধরার পরেও কেন পুলিশ তাদের হেফাজতে নেবে না এমন প্রশ্ন করলে স্হায়ীয় সাংবাদিক এবং দৈনিক দেশ বাংলার ডিএমপির উত্তরা বিভাগের সিটি রিপোর্টার মনির হোসেন জীবন ও মোস্তফা কামাল সুমনের ছোট ভাই দৈনিক অবজারভার এবং (বাংলা টিভি) নিজস্ব প্রতিবেদক রুমন মোস্তাফিজ এর সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন পুলিশের এই এসআই।
এসময় পুলিশের এ কর্মকর্তা অনেকটাই রাগান্বিত কন্ঠে বলেন, আপনি ডিসি, এডিসি, এসি ও ওসিকে কল করেন। যাকে খুশি তাকে ফোন করেন । আমার কোন সমস্যা নেই। আমি ওসি মেহেদি হাসানের সাথে কথা বলছি। আমি দুই চোরকে ধরে থানায় নিতে পারবো বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে পুলিশের এমন আচরণে হতবাক ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন ও পুরো এলাকাবাসী। এরআগে, পুলিশের কথা শুনে ভেঙ ধরেন (টালবাহানা) জনতার হাতে আটক পেশাদার দুই চোর। এরপর পুলিশের এসআই তারবহনকৃত সরকারি গাড়িটি তার সহযোগি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে সুমনের বাড়ির পাশে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের সামনে গেলে অনেকটাই মনক্ষুণ্ণ এবং বাধ্য হয়ে জনতার হাতে আটক দু’ চোরকে পুলিশের সামনেই ছেড়ে দেয় জনতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী ও একাধিক ট্রাকচালক অভিযোগ করে দৈনিক দেশ বাংলাকে জানান, তুরাগ থানার উপ- পরিদর্শক(এসআই) মোজাম্মেল দীর্ঘদিন ধরে তুরাগের পঞ্চবটি ও তুরাগের নতুন সেক্টরগুলোতে বালুভর্তি ট্রাক ও বিমানবন্দরগামী বিদেশ ফেরত যাত্রীসহ নিরীহ ট্রাকচালকদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে, ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক মোস্তফা কামাল
সুমন দৈনিক দেশ বাংলাকে জানান, এর আগেও এই চোরেরা ভাড়াটিয়ার রুম থেকে ২২ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে গেছে। ঈদের সময় লোকজন কম থাকার সুযোগে গতকাল বুধবার সন্ধার পর আবারো বাসার ভেতরে প্রবেশ করে রুমে চুরির চেষ্টা করছিলো। ঠিক তখনই আমরা দুই চোরকে কৌশলে ধরে ফেলি। পরে আচার, আচরণে সন্দেহ হলে ভাড়াটিয়ারা তাদের তল্লাশি চালায়। তাদের পকেট থেকে একে একে বের হতে থাকে চুরির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি। আমার বাসাটি সিসিটিভি ক্যামেরা ধারা পরিচালিত। এ চুরির বিষয়টি তুরাগ থানা পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ এসে উল্টো সবার সঙ্গে বাজে আচরণ শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে পুলিশের সামনে চোরদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে, তুরাগের স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে দৈনিক দেশ বাংলাকে জানান, তুরাগে গভীর রাতে ও দিনে-দুপুরে চুরি হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। লোহার তৈরি গেট কেটে, তালা ভেঙ্গে বহুতল ভবনের নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে ঘটছে এমন ঘটনা। বেশ কিছু দিন ধরে বেড়েছে চুরি ডাকাতির ঘটনা।
এব্যাপারে আজ সকালে তুরাগ থানার অভিযুক্ত এসআই মোজাম্মেল এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়টি ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলমকে জানানো হলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখবেন বলে দৈনিক দেশ বাংলা প্রতিবেদককে জানান তিনি।