
তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা:
রাত পোহালে গাইবান্ধায় পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদগাহ্ মাঠে নামাজ শেষে জবাই করা হবে গরু-ছাগল-ভেড়া। জেলার প্রায় দেড় লাখ কোরবানি পশুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দা-বটি-ছুরি। শনিবার (৯ জুলাই) গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুরে দেখা যায়, কামার শিল্পদের চরম ব্যস্ততা। তারা আপন খেয়ালে লোহা ও উৎপাদন উপকরণ আগুনে পুড়ে নানা ধরনের কোরবানির জিনিসপত্র তৈরী করছিলেন।
জানা যায়, জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় সহস্রাধিক কামার সম্প্রদায় রয়েছে। লৌহজাত দ্রব্য দিয়ে নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। প্রায় একদশক আগে এ পেশায় কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে কাঁচা লোহা ও উৎপাদন উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় তাদের পেশাটি ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে এই পেশা ছেড়ে বেছে নিয়েছে অন্য কাজকর্ম। তবে কতিপয় কামার সম্প্রদায়ের মানুষ এখনো আঁকড়ে ধরে রয়েছে বাপ-দাদার পেশাটি। তবে সারা বছর ধীরগতিতে কাজ করলেও কোরবানির ঈদে তাদের বেড়ে যায় চরম ব্যস্ততা। এ সময়ে আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পশুর জবাইয়ের জন্য তৈরী করেন বটি-দা ও ছুরিসহ অন্যান্য উপকরণ। দিন-রাত পর্যন্ত টুংটাং শব্দে মুখরিত হয় কামারশালা।
কোরবানি উপলক্ষে টানা একমাস কাজ করে প্রায় ৩ মাস চলার মতো অর্থ সঞ্চিত রাখেন তারা। এভাবে জীবনজীবিকা চলছে এই কামার শিল্পদের।
কামার শিল্প কোকিল চন্দ্র জানান, গৃহস্থালিদের প্রয়োজনীয় কোঁদাল,হাসুয়া,খন্তা, কুড়াল, কাস্তেসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরীতে আগের মতো তেমন লাভ হয় না। একদিকে কাঁচা লোহার দাম বেশী, অন্যদিক চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশাটি ধরে রাখা দায় হয়ে পড়েছে।
শ্রী পুতুল চন্দ্র নামের আরেক শিল্প বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ঈদ-উল আযহার কোরাবানি উপলক্ষে প্রচুর কাজের চাপ রয়েছে। প্রায় একমাস কাজ
করে পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেও প্রায় ৩ মাসের খোরাক গচ্ছিত রাখা সম্ভব।
এদিকে, গাইবান্ধা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪৫টি। ইতোমধ্যে এসব পশু জবাইয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।