

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আদালতের আদেশকে তোয়াক্কা না করে এক মিজান চেয়ারম্যানের কর্তৃত্ব বহাল রাখতে গিয়ে ধামরাইয়ের যাদবপুর বিএম স্কুল এণ্ড কলেজে বেহাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের মাঝে দলাদলি, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক গুটিতে পরিনত করাসহ অভিভাবকদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সংঘাতময় পরিবেশ। নানা কুটকৌশলে শিক্ষকদের হয়রানিসহ নাজেহাল করা হচ্ছে অহরহ। ধারাবাহিক অচলাবস্থায় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
যাদবপুর বিএম স্কুল এণ্ড কলেজ গভর্ণিং বডির বিতর্কিত নির্বাচন দেখিয়ে স্বঘোষিত সভাপতি হিসেবে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব কব্জা করেন স্থানীয় বাইশাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান। এ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কিত পরিস্থিতির মুখে এলাকার সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ পরিদর্শন বরাবর ডিও লেটার পাঠান। এতে অভিভাবকমন্ডলীর আস্থাভাজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূরুজ্জামানকে গভর্ণিং বডির সভাপতি মনোনয়ন প্রদানের সুপারিশ করা হয়। একই ডিও লেটারে আরো দুই জন সদস্যের বিষয়ও উল্লেখ ছিল। কিন্তু কোন কিছুকে পাত্তা না দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যথেচ্ছা পরিচালনা অব্যাহত রাখায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের পক্ষে জনৈক মোঃ লিটন মিয়া বাদী হয়ে ‘সভাপতিত্ব’র বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে রীট (রীট নং ১১৪০৮/২০২২) দাখিল করেন। বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এর বিচারপতি জাফর আহাম্মদ ও বিচারপতি মোঃ আখতারুজ্জামান দ্বৈত বেঞ্চ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্ব’র উপর ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এর নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় সংসদ সদস্য’র সিদ্ধান্ত কোন কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছেন না দাপুটে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি সবকিছু উপেক্ষা করে যাদবপুর বিএম স্কুল এণ্ড কলেজের যাবতীয় কর্মকান্ড যথেচ্ছাভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগও করছেন স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে।
এরইমধ্যে আরেকজন অভিভাবক মোঃ শরিফ হোসেন গত ২ ফেব্রুয়ারি একই ব্রেঞ্চে আরো একটি রীট পিটিশন (নং ১১৯০/২০২৩) দায়ের করেন। এর শুনানী শেষে মহামান্য হাইকোর্ট এর ব্রেঞ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে মোঃ মিজানুর রহমান মিজান এর সভাপতিত্ব কেন বাতিল হবে না মর্মে রুল জারী করেন। এ ব্যাপারেও কোনো জবাব দাখিল না করেই নিজের জবরদখল কায়েম করে চলছেন মিজান চেয়ারম্যান। বরং যারা তার অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছেন তাদের সন্তানদের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়ন করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবকদের উপর চলছে হুমকি ধমকি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান মিজান জানান, অভিভাবক সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়েই স্কুল এন্ড কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলছি। তারা যে রীট করেছিল তা আদালত কর্তৃক খারিজ ঘোষণার পরই কেবল আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। তবে কবে নাগাদ এ রীট খারিজ হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাননি তিনি। তাছাড়া আমি নিজেও একটি রীট দাখিল করেছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশেই বিরোধের সুষ্ঠু নিস্পত্তি হবে বলে আমি আশাবাদী। তবে রীটকারীরা বলেছেন, এক ইউপি চেয়ারম্যানের জবর দখলের অপকর্মেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় তারা শিক্ষা অধিদপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপও কামনা করেন।

