
সাহিদা সাম্য লীনা :
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের হক অধিকার মূল্যায়নের দিন। দিকে দিকে নারীর জয় জয়কার। বিভিন্ন স্টাইলে। দিন বদলে গিয়েছে, এরপর দিনের আলোতে রং যুক্ত হয়েছে। দিনের আলোর পরিবর্তন হয়েছে। সে আলোতে নারীর পদচিহ্ন স্মার্ট হয়েছে। বহু বছর নারী নিয়ে লিখে আসছি, নিজেও নারী বলে। নারী না হলে বুঝতাম না নারীর ব্যথা। নারী ঘরের ভেতর বন্দি থাকার যন্ত্রনা। এতো নারীর নির্যাতন নিয়ে লিখেছি অনেকটা সময় লেখার বিরতী চেয়েছি। হক আদায় করে নিজের কাজ বুঝে নিয়েছি। হ্যাঁ এমন নারী আজ দিকে দিকে। এ লড়াই ছিল মৃত্যুর সাথে লড়াইয়ের মতো।
বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের দেশ। কিন্তু এই ক্ষমতা থাকা সত্বেও নারীকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ক্ষেত্র বিশেষে এটার প্রতিফলন দেখা দিয়েছে বারবার। নারী সব পেশায় আছে। নারী কাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে এগিয়ে এতে। শিক্ষকতা নাকি নারীর জন্য সবচেয়ে ভাল পেশা। নারীর চয়েসে, নারীর কাজে আগ্রহ বেড়েছে অন্য পেশায় ২০১২ থেকে একটা আমুল পরিবর্তন আমরা পেয়েছি। আগ্রহ ইচ্ছাটাকে সামনে রেখে তরতর করে নিজেকে তৈরি করেছে নারী। যেমন ডাক্তার, আইনজীবি, ব্যাংকার। ব্যাংকে গেলে নারী ৪/৫ জন দেখা যায়। উকিল তো ভুরি ভূরি। নারী ডাক্তার নব্বই দশকের আগে থেকেই বেড়ে আছে। তাহলে ভাবা যায় কঠিন কাজ মেয়েরা শিখে জন্ম থেকে । একজন দাই বাচ্চা মায়ের পেট থেকে আনার ঝুঁকিপূর্ণ কাজটা করতে পারে। পৃথিবী জন্মের পর নারী তা শিখেছে অবলীলায়, দুর্দান্ত সাহসে। পৃথিবীর জ্ঞানভান্ডার ঋদ্ধ হবার সাথে সাথে নারী চিকিৎসক তৈরি হয়ে গেছে। গাইনী বিশেষজ্ঞ দেশে শত শত। শিক্ষকতার পর নারী ডাক্তার সবচেয়ে বেশি। এরপর ব্যাংকার আর রাজনীতি তে নারী সবচেয়ে বেশি। এপর প্রশাসনের স্থানে চলে এসেছে নারী। ভাবা যায়। বিষয়টা সহজ হয়ে গেছে। নারী ম্যাজিস্ট্রেট ইউনো এসব টাইটেল নারীকে শক্তিমান করেছে। নারী সার্থক। নিজেকে শালীন রেখে কাজ করা যায় নারী প্রমান করে ফেলেছে। ধাপটা পরিবর্তন হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা ,ব্যবসায়ী হয়েছে এর ভেতরেই। যা কিছু কল্পনার বাহিরে তা হয়েছে। এখন অনলাইনে নারী ব্যবসায়ী সরাসরি যুক্ত ও সফল তারা , তাদের কাজে। নারীই নারীকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পুলিশে নারী পুলিশ, এসপি নারী! কী সুন্দর ক্ষমতা! তাও সব গুনের ভেতরে থাকা নারীরাই হচ্ছে। নারী ব্রান্ড পোমোটার। আহ এমনটা আমাদের নারীদের পাওনা ছিল। প্রাইভেট কোম্পানীতে নারী আছে থরে থরে। নারী এখন ঘুমালেও চলে।
আগে এই নারী দিবসের নাম ছিল কর্মজীবী নারী দিবস। আবার এটা জাতীয় নারী দিবস হিসেবেও পরিচিত ছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটিতে উদযাপিত হয়েছিল। প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবসটা ৮ মার্চ তারিখে পালন হয়ে আসছে। তবে বিশ্বের নানা প্রান্তে নারী দিবস পালনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একেক রকম। কোথাও সন্মান ও শ্রদ্ধা মুখ্য বিষয় আর্থিক,র াজনৈতিক ও সামাজিক দিক বেশি গুরুত্ব পায়।
নারী নিয়ে অবজ্ঞা করে কিছু বলার দিন ফুরিয়েছে। নারী এখন পুরোদমে পেশাদার। পুরুষ যদি কাজ নাও করে তবে নারী তা ধরে রাখতে পারবে চারপাশ। দুনিয়াটা নারী পুরুষের সন্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। তবে নির্যাতন বন্ধ হবে না। এটা থাকবে। পুরুষও নির্যাতন হয়। ভাল খারাপের মধ্যে টিকে থাকতে হবে। সব নিখুঁত কোথাও থাকবে না। নারী সামনে যাবার আর পথ বাকি নাই। সব অর্জন করে ফেলেছে। এখন শুধু তা ধরে রাখার পালা। সেটাকে আরো উন্নত করা। কাজ ,অবস্থানকে আরও পাকাপোক্ত ও স্থায়ী করা। তাহলে কোন ধরণের অপশক্তি নারীদের বাধা দিতে আসবে না। নারী চাইলে নিজেকে অনেক দূর প্রসার করতে পারে নিজ গুনে,মেধায়। তবে নারী হয়ে নারীকে হিংসা পরিহার করতে হবে। ভুল বোঝা, প্রতিহিংসাপরায়ণ কখনো কাউকে সামনে নিতে পারে না। সামনে সময় আরো কঠিন হবে। নতুন শক্তিতে নারীদের আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
জাতিসংঘ প্রতি বছর নারী দিবসের জন্য একটি প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করে দেন এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় সেই বিষয়ের আলোকে বাংলাদেশের নারীদের জন্য থিম নিধার্রণ করেন। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন।
অর্থাৎ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য থাকবে না। এখানেও নারীদের সর্বাত্বক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এভাবেই চলবে নারী পুরুষের সন্মিলিতভাবে পৃথিবীর সব কাজ ,সেটা ঘরে বাহিরে। যত কঠিন কাজ হোক উভয়ের চেষ্টায় নতুন উদ্ভাবন হোক প্রযুক্তির সকল শাখায়। জয় নারী।