
নোয়াখালী থেকে সংবাদদাতাঃ
নোয়াখালীর জেলার বিভিন্ন হাটবাজারের কোথাও এখনো কোরবানির পশুরহাট জমে না উঠলেও বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন খামারে জমে উঠেছে কেনাবেচা ।বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে গরু কেনার ঝামেলা ও ঝুঁকি এড়াতে খামার থেকে পছন্দসই গরু সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এবার জেলার অনেকগুলো খামারে লাইভ ওয়েট স্কেলে দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে। খামারে গরু বেচাকেনায় দালাল বা মধ্যসত্বভোগী না থাকায় ক্রেতা বিক্রেতা কোন পক্ষকেই বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছেনা। এতে দু’পক্ষই লাভবান হচ্ছেন। খামার থেকে গরু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য বাড়তি সুবিধা হচ্ছে পশুরহাট থেকে গরু কিনলে হাসিল (টোল) বাবত শতকরা হারে যে টাকা দিতে হয় খামারে তাও লাগেনা।
সরেজমিনে নোয়াখালী সদর উপজেলার পশ্চিম চর উড়িয়া গ্রামে মানফাত মিট-ক্যাটেল এন্ড ডেইরী ফার্মে প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে গরু কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় চোখেপড়ে। প্রাকৃতিক উপায়ে দেশি গরু মোটাতাজা করণ ফার্মগুলোর মধ্যে বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ খামারে গত পাঁচবছর থেকে লাইভ ওয়েট স্কেলে গরু বিক্রি করাহয়।
খামারটিতে এবার বিক্রিরজন্য সর্বনিম্ন দুইশ কেজি থেকে সর্বোচ্চ সাতশ কেজি ওজনের দুইশটি গরু রয়েছে। এরমধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত৭০টি গরু বিক্রির জন্য বুকিং হয়ে গেছে। এখানে প্রতি কেজি ষাঁড়েরমূল্য ৪৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি বলদের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৮০ টাকা। এ হিসেবে একলক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দামের গরু রয়েছে খামারটিতে।
ক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্যান্য বারের অভিজ্ঞতায় এবারও ভালো গরু পাওয়ার আশায়এ খামারে আসছেন তারা। এখানে পছন্দসই গরু ঠিক করে বুকিং দিয়ে ঈদের আগ পর্যন্ত খামারেই রাখার সুবিধা পাচ্ছেন ক্রেতা। এক্ষেত্রে গরু নেওয়ার সময় পরিমাপ করে বুকিংয়ের সময় নির্ধারিতমূল্য পরিশোধ করতে হয় ক্রেতাকে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ঈদের দিন সকালেও বাড়িতে গরু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
খামারের কর্মরত শ্রমিক আবদুর রহিম জানান, ঈদের কয়েক মাস আগে দেশের বিভিন্নএলাকা থেকে দেশি গরু সংগ্রহ করেএখানে এনে নিকটস্ত সরকারি পশুচিকিৎকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে দেশিখাবার ও রোগবালাই প্রতিশেধক দিয়ে মোটাতাজা করে বিক্রি করাহয়। খামারের সুন্দর, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ যে কারো পচন্দ হবে।
মানফাত মিট-ক্যাটেলএন্ড ডেইরীফার্মের মালিক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, ২০১৮সালে ৭ একর পতিত জমিতে ৮০ টি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতিবছর ২০০ গরু বিক্রি হয় এ খামারে। তার পুরো খামারটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া। শেডের ভেতরে প্রতিটি গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চা। রয়েছে গরুর গোসল, চিকিৎসা ও প্রজননের জন্য আলাদা ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, নোয়াখালীতে সর্ব প্রথম আমাদের খামারেই লাইভওয়েট স্কেলে গরু বিক্রি শুরু করি। আমি মনে করি বাজারে গেলে মানুষ নানাভাবে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। কোরবানির হাটে দালাল থাকে তারা মানুষকে বিভ্রান্তিরমধ্যে ফেলে দেয়। খামারে সুন্দর পছন্দের গরুলাইভওয়েট স্কেলে কিনতে পারে।আমরা শতভাগ সুস্থ ও সুঠাম দেহের গরুদিয়ে থাকি। খামারে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার আবার কখনো দুইবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুগুলোকে গোসল করানো হয় এবং পরিচর্যাকরাহয়। এখানে চাষ করা ঘাসের পাশাপাশি খর, ভুসি ও নিরাপদ পোল্ট্রি ফিড খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে।
গরুর বাজার পরিস্থি সম্পর্কে তিনি বলেন, গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার গরু মোটাতাজা করণে খামারীদের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ বেড়েছে। যার কারণে গরুর বাজার দরের ওপরেএর প্রভাব পড়েছে। এরপরও নিছক লাভের চিন্তা না করে পবিত্র ঈদে কোরবানির জন্য মানুষকে সুস্থ, সবল গরু দিতে পেয়ে মানষিক প্রশান্তির পাশাপাশি সাওয়াবের অধিকারী হওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাজী রফিকুজ্জামান জানান, নোয়াখালীতে কোরবানির জন্য এবার ১ লক্ষ গবাদি পশু লালন পালন করা হচ্ছে যা জেলায় চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার বেশি। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সাথে সভা করে কোরবানিরপশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিধার্থে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাণি সম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে একাধিক অনলাইনে প্লাটফর্মে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।