
আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী):
এবারের ঈদে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কম সময়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছানো যায় বলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিগত বছরের তুলনায় পর্যটকদের আনাগোনা নেই। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গতবারের তুলনায় পর্যটক বৃদ্ধি পেয়েছে এর কারণ হিসেবে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই’র কো-চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দীন (হোটেল মোটেল স্ট্যান্ডিং কমিটি) এক (ভার্চুয়াল) সাক্ষাৎকারে জানান, পদ্মাসেতু ঘিরে কক্সবাজার কুয়াকাটার কাছে পর্যটক হারাচ্ছে এতে পর্যটন খাতে কক্সবাজারে কিছুটা লোকসানে ফেলেছে। পদ্মাসেতু হওয়ায় কুয়াকাটা এইবছর প্রতিদ্বন্দ্বীতা তৈরি হয়েছে।
দক্ষিনাঞ্চল পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অপরূপ দৃশ্য অবলোকনে পর্যটন কেন্দ্রটি দেশের অন্যতম যেখানে একই স্থানে দারিয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরঞ্জনে এক কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে প্রথমদিনে আশানুরূপ পর্যটকদের আগমন না ঘটার ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হতাশ। কিন্তু কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে ঈদুল আযহার দ্বিতীয় দিন থেকে টানা তিন দিন পর্যটকদের প্রায় শতভাগ বুকিং সম্পন্ন রয়েছে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট আবাসিক হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা এমনটাই জানায়। এতে মোটামুটিভাবে অর্থনৈতিক খাতে লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে ঈদের দ্বিতীয় দিনে দুপুর থেকে পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের বহুগুণে আগমন লক্ষ্য করা গেছে।
তবে বিশেষ করে পর্যটকরা জানান, দেশের নিরাপত্তা জোরদারে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করতে না পাড়ার ফলে অধিকাংশ পর্যটকরা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ঈদের প্রথম দিন ভ্রমণ করতে পারেনি এ কারণেই এবারের ঈদে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের উপস্থিতি না মেলার প্রধান কারণ হয়েছে।
পর্যটকদের বরনে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ঈদের ছুটিতে মানসম্মত সেবা দিতে প্রস্তুত। কুয়াকাটা পর্যটকদের ভ্রমণ পিপাসা মেটাতে হোটেল মোটেলগুলোতে রয়েছে ৫০শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা। তবে সমুদ্র সৈকত লাগোয়া যেসব হোটেল মোটেলগুলো রয়েছে বরাবরের মতো সেগুলোর ভাড়া কমানো হয়নি বলে জানাযায়। তবে পর্যটকরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, খুবই দুঃখজনক বিষয় হলো কুয়াকাটায় বিভিন্ন বিশেষ দিনে খাবার ও আবাসিক হোটেল মোটেলগুলোর ভাড়া বৃদ্ধি করে দেওয়া হয় যার ফলে পর্যটকরা ছুটির বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটা এসে চাহিদা মাফিক মেটাতে পারছে না ভ্রমণ পিপাসা, তাই সেদিকটা যেন লক্ষ্য করে একটি নিয়মের মধ্যে আনা হয়; তা না হলে পর্যটকরা দ্বিতীয়বার আর কুয়াকাটা আসবে না।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সাগরকন্যা কুয়াকাটা। এখানে রয়েছে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সমুদ্র সৈকত। আছে প্রাচীন রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত নানা স্থাপত্য নিদর্শন। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুয়া, জাতীয় উদ্যান, গঙ্গামতির লেক, লাল কাঁকরার অভয়ারণ্য, সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা চর বিজয়সহ আরো বেশ কয়েকটি দ্বীপ। যেখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ সুন্দরবনের পূর্বাংশ ফাতরার বন।
সোনাকাটা, সংরক্ষিত ফকিরহাট উল্লেখযোগ্য।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দ্রুত যোগাযোগ ব্যাবস্থার সুবাদে এই প্রথমবারের মতো ঈদের লম্বা ছুটি উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই সৈকতে ভ্রমণে ছুটছেন পর্যটক। তাই কুয়াকাটার একাধিক পর্যটক স্পট আগাত পর্যটকদের পদচারনায় ইতোমধ্যে জমজমাট হয়ে উঠছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবার ঈদুল আযহার ছুটিতে পর্যটকদের অগনিত সমাগম হবে। ইতোমধ্যে হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট গুলোর ঈদুল আজহার ছুটিতে প্রায় ৭০–৮০ ভাগ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, আগত পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ১০জন দায়িত্ব পালন করছে। সব মিলিয়ে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে কুয়াকাটা ভ্রমণ করতে পারবে পর্যটকরা। তিনি আরো জানান, অনাকাঙ্খিত ঘটনা এরাতে ফায়ার সার্ভিসের টিম রয়েছে কুয়াকাটা সৈকতে।
ফেরি যুগের অবসানের পর কুয়াকাটা ভ্রমনে এবারের ঈদে ব্যাপক পর্যটকের ভিড় হবে। তাই কুয়াকাটার সকল পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার রাখা হবে। রেস্টুরেন্টের কোথাও বাসি পচা খাবার যাতে পরিবেশন করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।