
আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী):
“প্রকৃতিমাখা সবুজে ঘেরা নির্মল পরিবেশে ভ্রমনের সার্থকতা এবং তৃপ্তি পাওয়া যায়।” তাইতো দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমনে সামর্থ্যের মধ্যে পর্যটকদের বিনোদনের খোঁড়াক মেটায়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ঈদের ছুটিতে বিগত ৫ বছরের তুলনায় রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দীর্ঘ দেড় কিলোমিটার সৈকত জুড়ে পর্যটকদের গাঘেঁষা ভীড়ে প্রকৃতির রাজ্যের অনিন্দ্য দৃশ্য অবলোকন করতে বাধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে উঠেছে। তবে এবারও বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
পর্যটন কেন্দ্রের অন্যান্য ভ্রমণ স্থান সমূহে ঘুরে দেখা গেছে অধিকসংখ্যক পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়। ঈদের তৃতীয় দিনেও একই চিত্র দেখা গেছে সমুদ্র সৈকতে। এতে কুয়াকাটায় পর্যটন খাতে প্রায় কয়েকশ কোটি টাকা আয় হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ঈদের চতুর্থতম দিনেও রয়েছে আবাসিক হোটেলগুলো অধিকাংশ ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং। হোটেল মোটেল কর্তৃপক্ষরা জানান ২০ই জুন পর্যন্ত পর্যটকদের অগ্রিম বুকিং আছে এবং পর্যটক আগমনের ধারা অব্যাহত থাকবে।
কয়েকমাসের ব্যবধানে কুয়াকাটা পর্যটন ব্যাবসায়ীদের চোখে মুখে আনন্দমুখর হাসি ফুটেছে। পর্যটন নগরীর বাসিন্দা সহ কয়েকশত পরিবার পর্যটন নগরীর সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে এই আঞ্চলিক এলাকার মানুষের আয়ের একমাত্র মাধ্যম পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে।
তাই পর্যটকদের সেবার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, আগাত পর্যটকরা যাতে কোনো বিষয়ে কষ্ট না পায় এবং কোনো ধরনের হেনস্তার শিকার কিংবা ভোগান্তিতে পরতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কুয়াকাটায় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বরাবরের মতো আরো বেশি আন্তরিক রয়েছে। স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্ত করেন যে আমরা পর্যটকদের প্রতি ভালো আচরণ না করতে পারলে তারা কুয়াকাটা ভ্রমণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন এতে আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের সুনাম নষ্ট হবে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব ফেলবে যে কারনে পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দিতে স্থানীয় সংশ্লিষ্টসহ কুয়াকাটা পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন একযোগে বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে। বিশেষত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর পূর্বের তুলনায় কুয়াকাটায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যাবসায়ী, কর্মচারী, ও শ্রমিকদের জন্য পর্যটকদের ভোগান্তি নিরসনে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অপরাধ প্রবনতা দিকে বিশেষ নজর রাখছেন যাতে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত আধুনিকতার এক দিগন্তে পৌঁছাতে পারে সে লক্ষে।
পর্যটকদের ভ্রমনে সী-বোটে সুন্দরবনের পূর্বাংশ, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ ও তিন নদীর মোহনা ও গঙ্গামতি ভ্রমনে মটর সাইকেলযোগে ও সী বোট কিংবা স্পিডবোটে করে যাতায়াত করা যেতে পারে; একই সমুদ্রের বুকে আনুঃ ৩০ কি.মি. দক্ষিণে সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা কয়েক হাজার একর জায়গাজুরে চর বিজয়ের অপরূপ দৃশ্য অবলোকনে। এবং সড়ক পথে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম রাখাইনদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের ৩৮ফুট লম্বা মূর্তি (মিশ্রিপাড়া), লাল কাঁকড়া অভয়ারণ্যে (কাউয়ারচর) খুব সহজে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দেখার সুযোগ আছে বলেই পর্যটকরা কুয়াকাটা ভ্রমনে অধি আগ্রহ প্রকাশ করছে। পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত পায়রা বন্দর ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের অর্থনীতির মাইলফলক হিসেবে আরো একটি নতুন পর্যটক স্পট; পর্যটকদের মনোরঞ্জনের এক আকর্ষিক পর্যটন জোন এলাকার নজরকাড়া সৌন্দর্য বর্ধনে পর্যটকদের প্রশংসায় ভাসছেন সংশ্লিষ্টরা।
গঙ্গামতির লেক, তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন সহ অন্যান্য পর্যটক স্পটে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তুলনায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নান্দনিকতার অভিন্নতা আছে বলেই প্রথমবারের মতো কুয়াকাটা ঘুরতে এসেছে বলে জানান আগত এক পর্যটক দম্পতি।
ঢাকা থেকে আগত আরেক দম্পতি বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের নান্দনিক সৌন্দর্য আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পদ্মাসেতু হওয়ায় আগের তুলনায় ভ্রমণের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল।
এখন আর কুয়াকাটা ভ্রমনে কোনো ভোগান্তি নেই, আমরা খুব অল্প সময় পদ্মাসেতু দিয়ে কুয়াকাটা পৌঁছেছি। তাই আমাদের পদ্মার ওপারসহ দেশ যোগে ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমণ চাহিদা মেটাতে যোগান দিতে পদ্মাসেতু এক বিশেষ মাত্রা হিসেবে প্রাধান্য পাবে বলে জানান মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত একটি পর্যটক দল।
তবে কুয়াকাটা কক্সবাজারের মতো হলেও কিন্তু ভিন্নতা রয়েছে শুধু নান্দনিককতার। যেকারণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কক্সবাজারের তুলনায় অভিন্নতা রয়েছে। যেখানে একই স্থানে দারিয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। তাই কুয়াকাটা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বেটার এমনটাই পরিলক্ষিত হয় অগণিত মানুষের মুখে।
কক্সবাজারের তুলনায় কুয়াকাটায় খাবারের মান ও দামের পার্থক্যে পর্যটকদের বিবরনে জানাযায়, সামর্থ্যের বাইরে আবাসিক হোটেল ভাড়া এবং খাবারের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারনে কক্সবাজার ভ্রমণের অনিহা প্রকাশ করেন তারা। আরো জানান, সে তুলনায় কুয়াকাটা সাধ্যের মধ্যে বিনোদনের সুযোগ রয়েছে বলেই কুয়াকাটায় দিনদিন পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। তবে বিশেষ করে কুয়াকাটায় হোটেল মোটেল গুলোতে পাচ’শ টাকা থেকে শুরু করে কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায় বলেই সারা দেশের পর্যটকরা কুয়াকাটামুখী হয়েছে।
সপরিবারে সৈকতে ভ্রমনে আসা এক দর্শনার্থী তরুণী বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে না আসলে আসলে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব নয় তাই দেশের প্রতিটি স্থানের ভ্রমণ পিপাসুদের কুয়াকাটার প্রকৃতির সৃষ্টি অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে সবাইকে আমন্ত্রণ করছি। আমি বলবো আপনারা আসুন এবং দেখুন
অতীতের তুলনায় কুয়াকাটায় পর্যটকদের সেবার মানোন্নয়নে সকল ভোগান্তি কমাতে ইতোমধ্যে কুয়াকাটা পৌরসভার পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ যা পর্যটন নগরীর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, গত জুনে কুয়াকাটা স্থায়ী বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ শেষ হলেও চলমান বছরের সম্পন্ন হবে। তাই পদ্মাসেতুর সাথেসাথে কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর উন্নয়নের এক আধুনিকতায় শিখরে পৌছাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পর্যটক ও স্থানীয়দের চিকিৎসার সুব্যবস্থায় কুয়াকাটা ২০ সয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে লোকবল ও সরঞ্জাম সংকট থাকলেও তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোজন করা হবে পর্যটন কেন্দ্রের গুরুত্ব বৃদ্ধির কারনে এমনটাই জানান পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. কবির হাসান।
কুয়াকাটা সৈকতে মাষ্টার প্লান বাস্তবায়নের বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উন্নয়নে সম্ভব্যতা যাচাই চলছে এবং উন্নয়ন কতৃপক্ষ গঠন দ্রুত সময়ে শেষ হবে। তবে কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর মাষ্টার প্লান বাস্তবায়নে সরকার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।