

বর্ষা মৌসুমে ‘পাহাড়ী কণ্যা’ বান্দরবানে প্রকৃতি ভিন্ন সাজে রূপ ধারণ করে। এ সময় সবুজে ঘেরা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতেই চোখ জুড়িয়ে যায় । তাছাড়া আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ এবং এগারোটি নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের সমাহার রয়েছে একমাত্র বান্দরবানে ।
তাই এবারেও কোরবানি ঈদের ছুটিতে সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘের মিতালি উপভোগ করতে পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্পট হিসেবে বান্দরবানকে বেছে নিবে। এখানে রয়েছে পাহাড়-পর্বত ছাড়াও অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, স্বচ্ছ জলধারা লেক এবং জানা-অজানা অসংখ্য পর্যটন স্পট।
রবিবার সকালে শহরের আশপাশে কয়েকটি পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসন পরিচালিত নীলাচল, মেঘলা ও শৈলপ্রপাত পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে নতুনভাবে সাজানো হয়নি। ঈদ কাছে এলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে দেয়ালে দেয়ালে নতুন রঙ লাগিয়ে সাজিয়ে তুলতো স্থানীয় প্রশাসন। তবে এবার বষার্কাল হওয়ায় নুতন করে সাজানো হয়নি। কিন্তু এসব পর্যটনকেন্দ্র বরাবরই গোছানো দেখা গেছে।
তবে পর্যটকদের হাঁটাচলার পথ, জায়গায় জায়গায় বসার স্থান ও সেলফি তোলার জন্য বিভিন্ন ‘ভিউ পয়েন্ট’ বেশ পরিস্কার ও গুছিয়ে রাখা হয়েছে।
শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে টিকেট বিক্রেতা আদীপ বড়ুয়া বলেন, এবার ঈদুল আযহা উপলক্ষে নতুন করে রঙ করে সাজানো হয়নি। ভরা বর্ষার দিনে চুনকাম ও রঙ লাগালেও খুব বেশি ফুটে না। তাও বৃষ্টির পানিতে আবার নষ্ট হয়ে যায়।তবে পর্যটন কেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মীরা প্রশাসনের নির্দেশে বেশ গুছিয়ে রাখছেন। পর্যটকদের বসার স্থান এবং হেঁটে বেড়ানোর জায়গায় তারা প্রতিদিন লতাপাতা পরিস্কার করে রাখা হচ্ছে। প্রতিবছর ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায় জানালেন তিনি।
অন্যদিকে শহরে পৌঁছার তিন কিলোমিটার আগে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে সবচেয়ে আকর্ষনীয় জায়গা হল এর ঝুলন্ত ব্রীজ। কয়েক দিন বৃষ্টি না থাকায় লেকের পানি বেশ স্বচ্ছই রয়েছে। সেখানে বড় ও ঘন গাছগাছালি থাকায় গোটা মেঘলা এলাকাজুরে এখন ছায়াঢাকা পরিবেশ। লেকের পানিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে প্যাডেল বোট। আর পাহাড়ে এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে যাওয়ার জন্য রয়েছে কেবল কার।
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে টিকেট বিক্রেতা সুকুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পর্যটক বরণ করে নিতে ঈদের প্রস্ততি হিসেবে মেঘলা পর্যটক কেন্দ্র পরিষ্কার ও গোছানো করে রাখা হচ্ছে। মেঘলায় যারা বেড়াতে আসবে তারাও বেশ উপভোগ করতে পারবে।
শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কে বম পাড়ায় রয়েছে একটি প্রাকৃতিক ঝরণা শৈলপ্রপাত। বষার্য় ছলছল শব্দে এখন শৈলপ্রপাত ঝরণার পানি। বিনা টিকেটে ঝণার্য় নেমে মেতে উঠতে পারে যে কেউ। এতে ক্লান্ত শরীর তাজা করবে যে কাউকে।
এবার ঈদুল আযহায় জেলা শহরে ৬৪টি আবাসাকি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে মাত্র ৩০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়েছে বলে জানালেন জেলার আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বষার্য় পাহাড়ী পথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় খুব কম পর্যটকই বেড়াতে আসবে। এছাড়া সরকারিভাবে ঈদ ছুটির পর আর কোন বন্ধ দিন নেই, সবকিছু মিলে পর্যটন নগরী বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকতে পারে।
তবে যারাই বেড়াতে আসুক সবাইকে সুন্দর ব্যবহার করে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবাসিক হোটেল-মোটেল ও খাবার হোটেল যাতে কেউ বাড়তি দাম নিতে না পারে। কোন পর্যটক যাতে হয়রানি শিকার না হয় সেজন্য সমিতির পক্ষ থেকেও নিজস্ব তদারকি থাকবে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান জোনের ট্যুরিষ্ট পুলিশ সুপার আব্দুল হালিম বলেন, ট্যুরিষ্ট পুলিশের সকল সদস্যদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাজনিত কোন সমস্যা নেই। তারপরও ট্যুরিষ্ট পুলিশের সদস্যরা পর্যটকদের সকল নিরাপত্তা ও সেবার জন্য সবসময় তৎপর থাকবে।