
এস এম হুমায়ুন কবির, রামু ( কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ
রামুর লোমহর্ষক হত্যাকান্ডে ঘটনা গোটা দেশ যখন আলোচনা তুঙ্গে,তখন হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড রাশেদা কে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটন করার দাবী জোরালো হচ্ছে। আপন শ্বাশুড়ি কে পুত্র বধু কর্তৃক ৬ টুকরো করে মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনায় ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন আসছে একা পারবে কি খুন করে পাষবিক কায়দায় ৬ টুকরো করে বাড়ির টিউবওয়েলের পার্শ্বের মাটিতে গর্ত করে মাটিচাপা দিতে?নাকি পরকিয়া প্রেমিকের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্হায় দেখে ফেলায় কাল হল শ্বাশুড়ি মমতাজ বেগমের? এমন লোমহর্ষক হত্যাকান্ডে আইনশৃংখলা বাহিনী কে ও ভাবিয়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পিপিএম ও অন্যান্য সংস্হার পদস্হ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পাশাপাশি আত্নীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলেছেন। শ্বাশুড়িকে হত্যার পর ৬ টুকরো মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনায় আটক পুত্রবধু রাশেদা বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন কালে হত্যাকান্ডের শিকার মমতাজ বেগমের পরিবারের একাধিক সদস্য ও প্রতিবেশীরা জানান, রাশেদা বেগম একা এ ঘটনা সংগঠিত করেনি, এ ঘটনার পেছনে আরো কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। এমনকি রাশেদা বেগমের পরকীয়ার জের ধরে এ ঘটনা সংগঠিত হতে পারে এমন আশংকাও করছেন তারা।
সোমবার, ১৮ জুলাই সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পিপিএম। এদিকে ময়না তদন্ত শেষে সোমবার বিকালে মমতাজ বেগমের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রামু থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে অধিকত তদন্তে নেমেছেন। গোয়েন্দা সংস্হা ( ডিএসবি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাস্টার মাইন্ড গৃহবধূ রাশেদা কে আসামী করে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে গতকাল ১৮ জুলাই। একটি গোয়েন্দা সংস্হা এক কর্মকর্তা জানিয়েছে,পুরো ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান- ঘটনার দিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাশুড়িকে হত্যার দায় স্বীকার করেন রাশেদা বেগম
নিহত মমতাজ বেগমের স্বজনরা জানিয়েছেন- এমন লোমহর্ষক মৃত্যুতে তার পরিবারের সদস্যরা এখনো হতবিহবল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির হামজা জানিয়েছেন- মমতাজ বেগমকে হত্যার পর মাথা, দুই পা ও দুই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর বাড়ির আঙিনায় গর্ত করে মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। যেখানে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে সেখানে ছোট-বড় অনেকগুলো গাছের শিকড় ছিলো। দেখা গেছে- সেই গাছের শিকড়গুলো অভিজ্ঞ লোকজন দ্বারা করাত দিয়ে কাটা হয়েছে। এতগুলো কাজ নিখুঁতভাবে করা রাশেদা বেগমের একার পক্ষে অসম্ভব। তাই তার ধারণা এ হত্যাকান্ডে রাশেদা বেগম ছাড়াও আরো এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।
নিহত মমতাজ বেগমের ২ মেয়ে আয়েশা বেগম ও খুরশিদা বেগম জানিয়েছেন- রাশেদা বেগম গোপনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। এমনকি কয়েকবার গর্ভধারনের পরও ভ্রুন নষ্ট করে ফেলেন। তাদের ধারনা- রাশেদা বেগম পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন এবং পরকীয়ার জের ধরে এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। মায়ের মৃতদেহ উদ্ধারের আগেরদিন ওই বাড়িতে বোরকা পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি এসেছিলেন বলেও জানান তারা। হয়তো ওই চক্রটিকে ব্যবহার করে রাশেদা বেগম তাদের মা মমতাজ বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করে মৃতদেহ মাটিচাপা দিয়েছেন।
মমতাজ বেগমের নাতি রাসেল জানিয়েছেন- তার মামী রাশেদা বেগমের আচার-ব্যবহার সম্প্রতি অস্বাভাবিক ছিলো। এমনকি হত্যার পরও তিনি কৌশলে তা এড়িয়ে নানী মমতাজ বেগম মেয়ের বাড়িতে গেছেন বলে তাদের জানান। তিনি আরো জানান- তার মামা আলমগীর কয়েকদিন আগে কক্সবাজার শহরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরিতে যোগদান করেন। শনিবার তার মামা চলে যাওয়ার পর রাশেদা বেগম পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটান। তার ধারনা মামী হয়তো কোন পরকীয়া প্রেমিকের সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিলো। বাড়িতে বিষয়টি দেখে ফেলায় হয়তো মমতাজ বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করে নিজের অপকর্ম আড়ালের চেষ্টা চালিয়েছে। পরকীয়ায় জড়িত না থাকলে কোনদিন এতবড় ঘটনা সম্ভব হতোনা।
এদিকে সোমবার বিকালে জানাযার পর ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে- পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারি। নির্মম এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সকল দোষিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য রবিবার, ১৭ জুলাই বিকাল ৬ টায় উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম উমখালী হাজির পাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির আঙিনা থেকে মাটিচাপা দেয়া মমতাজ বেগমের ৬ টুকরো মৃতদেহ উদ্ধার করে রামু থানা পুলিশ। ওইদিন ঘটনাস্থল থেকে হত্যার ঘটনায় জড়িত পুত্রবধু রাশেদা বেগমকে আটক করে পুলিশ। রাশেদা বেগম কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ছোট চৌধুরী পাড়ার সৈয়দ নুরের মেয়ে। ৩ বছর পূর্বে নিহত মমতাজ বেগমের ছেলে আলমগীরের সাথে রাশেদা বেগমের বিয়ে হয়। এখনো তারা নিঃসন্তান। আটক রাশেদা বেগম হত্যাকান্ডের শিকার মমতাজ বেগমের আপন ভাতিজি।