
বগুড়া অফিস :
বগুড়ায় এবার গত বছরের তুলনায় ভুট্টার প্রায় দ্বিগুণ চাষ হয়েছে। বাজারে দাম বেশি, উৎপাদনে খরচ কম বলে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে বলে জানিয়ে বগুড়ার কৃষি বিভাগ। এবছর জেলায় ভুট্টার চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ৭ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে।
এদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন চরের চাষিরা ভুট্টা চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলে চেষ্ঠায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। জেলা এবছর ১ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছেন কৃষি বিভাগ। এদিকে ভুট্টা বাজাওে উঠার পর থেকে চাষীরা ভাল দাম পাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
জেলার সারিয়াকান্দি, গাবতলী, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলা উপজেলার প্রতিবছর ভুট্টার চাষ হয়ে থাকে। জেলার এসব উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষ করতে খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সেই অনুপাতে প্রতি বিঘায় ভুট্টার ফলন আসে ৩০ থেকে ৩৫ মণ। তবে চর এলাকায় বিঘাপ্রতি ভুট্টার ফলন হয় ৪০ থেকে ৫০ মণ।
এদিকে বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদী বেষ্টিত এলাকায় অনেক চর রয়েছে। উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল, হাটশেরপুর, কর্ণিবাড়ী, চন্দনবাইশা ও সদর ইউনিয়নের চরের জমির আনাচে কানাচে চাষ করা হয়েছে ভূট্টার। অথচ এই চরগুলোতে বেশির ভাগ সময় মরিচের চাষ করতে কৃষকরা। গত বছর এ উপজেলার চাষ করা হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার চাষ হয়েছে দ্বিগুণ অর্থ্যাৎ প্রায় ৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। খরচ কম হওয়ার কারণে চরগুলো ভূট্টার চরে পরিণিত হয়েছে। যে দিকে তাকানো যায় কেবলই চোখে পড়ছে সবুজ ভূট্টার গাছ আবার কোনো জমিতে পাকা ভূট্টার মোচায় থরে থরে গাথা কেবলই সোনালী ভূট্টার দানা।
উপজেলার চাষীরা বলছেন, আগে ফসলাদি করে তেমন একটা লাভ থাকেনি। এ বছর ভূট্টার চাষ করে ফসলের লাভের মুখ দেখছি আমরা। হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের চাষী বাদল রহমান এবছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। মাড়াই শুরু করার পর প্রতি বিঘায় ৩৫ মণের উপরে করে ভুট্টা তুলেছেন। বাজারে মণ প্রতি বিক্রি করছেন ৯০০ টাকা থেকে ১১শ টাকা পর্যন্ত। উৎপাদন খরচের তুলনায় দ্বিগুণ দামে ভুট্টা বিক্রি করতে পেরে খুশি তিনি।
কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ছোনপাচা চরের চাষী খয়ের উদ্দিন, বাবলা শেখ, আব্দুল গফুর জানান, চরে অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টার ফলন বেশি হয়। কম খরচে বেশি লাভবান ভুট্টা। এরই মধ্যেই ভুট্টা জমি থেকে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন পাচ্ছেন ৪০ মণের বেশি। বাজারে বিক্রি মাড়াই করা ভুট্টা করছি প্রায় ১ হাজার ৩শ টাকা মণ। এবছর গত বছরের তুলনায় আবাদ বেশি হয়েছে। তাই ভাল দাম পাবার আশা করছেন চাষীরা।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ফলন ও দাম ভালো থাকায় ভুট্টা চাষ করে চরের চাষীদের ভাগ্য বদলাচ্ছে এবার। এ মৌসুমে ৭ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে। আর এ ভুট্টায় ২শ’ ৫৭ কোটি টাকা বাজারে বিক্রির সম্ভবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হালিম সোমবার বলেন, এ মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দামও ভালো। এ চাষের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় ২২ হাজার কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচলক এনামুল হক জানান, আলুর চেয়ে ভুট্টা চাষ লাভ জনক, পরিশ্রম কম ও উৎপাদন খরচও কম তাই বগুড়ার কৃষকরা কম খরচে বেশী লাভবান হওয়ায় ভুট্টাকে বেছে নিয়েছে। গত বছর প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ। বিঘাতে ৪০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছর জেলায় ৭ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এ বছর জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এ হিসেবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৯ হাজার ৬৮৮ মেট্রিকটন। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত ভুট্টা চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৫২৩ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন হবে।