

বগুড়ায় আড়াই লাখের গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ৭শ’ টাকা দিয়ে শহরের বড়গোলা এলাকার আলম। অপরদিকে ফুলতলা এলাকার আব্দুল বাতেন তার ৩০ হাজার টাকার খাসীর চামড়া ৩০ টাকা ও ১০ হাজার টাকার চামড়া ৫টাকায় বিক্রি করেছেন। দাম কম হওয়ায় মাথায় হাতপড়েছে তাদের। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের থেকেও কম দামে চামড়া কিনে তা বিক্রয় করতে এসে একইভাবে মাথায় হাত পড়েছে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের। দাম না পাওয়ায় মৌসুমী ব্যবসায়ী নদীতে চামড়া ফেলে দিয়ে গেছেন বলেও জানা গেছে।
ঈদের দিন ও পরের দিন সোমবার বগুড়া শহর ঘুরে দেখা যায়, কোরবানীর পশুর চামড়ার দামে অনেকটায় কম। এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার চামড়া ব্যবসায়ি ও ট্যানারি মালিকেরা। তাছাড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বছরের পর বছর চামড়া ব্যবসায়িদের মোটা অংকের টাকা আটকে রয়েছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে বার বার ধরনা দিলেও তারা বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না ব্যবসায়িরা। গত বছরের চামড়ার টাকা এখনো পাননি বগুড়ার ব্যবসায়ীরা। এ বছর কিছুটা সংশয় লাঘব হবে বলে আশা করছেন চামড়া ব্যবসায়িরা।
ঈদের দিন রোববার বিকেলে ও সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া শহরের সাতমাথা, চামড়াপট্টি, চকসূত্রাপুর, বাদুড়তলা, চকযাদু ক্রসলেন, থানামোড়, চেলোপাড়া, শহরের বাহিরে ঠনঠনিয়া, কলোনি, বনানী, মাটিডালি, শাকপালাসহ কমপক্ষে ১০০ স্পটে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়িরা। রিক্সা-ভ্যান, অটোরিক্সা ও নসিমনে করের শহরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়িরা বিক্রি করছেন চকসূত্রাপুর রাস্তার দু‘পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী কাঁচা চামড়ার দোকানগুলোতে।
বগুড়ার চকসূত্রাপুরের চামড়া ব্যবসায়ি মোঃ সৈকত শেখ জানান, গত কয়েক বছরে বিক্রি করা চামড়ার দাম তুলতে পারি নি আমরা। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা নানা অজুহাতে চামড়ার দাম দেননি। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর চামড়ার দাম গড়ে ৫০ টাকা করে বেড়েছে। শহরের আরেক চামড়া ব্যবসায়ি মোঃ আবুল সরদার জানান, প্রতি বছর চামড়ার ব্যবসা করি। এবছর ধার করেই চামড়া কিনছি। ষাড়ের চামড়ার দাম আকারভেদে ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় কিনছি।
বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়িরা জানান, বর্তমানে প্রতি বস্তা লবণের দাম ১২৫০ থেকে ১৪০০ টাকা। ঈদের দিন চামড়া কেনার পর সেগুলোকে সংরক্ষণ করতে প্রতিটি চামড়ায় লবণ দেওয়া ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ গড়ে ২৫০ টাকা বাড়তি খরচ হয়। এরপর রয়েছে পরিবহন খরচ ও ব্যাংক ঋণের সুদ। ফলে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যায়।
এদিকে দাম না পাওয়ায় অজ্ঞাত এক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী ১০/১২টি গাভীর চামড়া রাগ করে চেলোপাড়া ব্রীজের উপর থেকে করতোয়া নদীতে ফেলে দিয়ে গেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সেলুন কর্মী সীমান্ত জানান। বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আকারভেদে গরুর চামড়া ৩০০ টাকা থেকে ৭০০টাকা ও খাসীর চামড়া সর্বোচ্চ ৩০টাকা দরে কিনেছেন তারা।
বগুড়া জেলা চামড়া মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সমিতির আওতায় ৩৮৭ জন সদস্য রয়েছে। যারা প্রত্যেকেই এবারো ঋণ করে চামড়া কিনছেন। প্রক্রিয়াজাত করার প্রধান কাঁচামাল লবণের দ্বিগুণ মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের বাড়তি মজুরির চাপ এবং গত কয়েক বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করার কারণে এ বছরও চামড়ার বাজারে ধস দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়িরা। চামড়ার দাম কমলেও লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণের যে প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়িরা ২৫ কোটি টাকার বেশি পান। পাওনা পরিশোধে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। তার পরও বগুড়ার ক্ষুদ্র ও চামড়া ব্যবসায়িরা এখনো বকেয়া টাকা পাননি। টাকা না পেলে চামড়া কেনা কষ্টকর হয়ে উঠবে। অনেকেই ধার-দেনা করে চামড়া কেনাবেচা করছে।
তিনি আরও জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনতেও ভয় পান।