

বিশাল রহমান, ঠাকুরগাও থেকেঃ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বিয়ের দাবিতে দুই দিন ধরে সামিউল্লাহ সামু নামের এক শিক্ষানবিশ আইনজীবীর বাড়িতে অবস্থান করছেন ২৫ বছর বয়সী কথিত প্রেমিকা।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দুপুরে অবস্থানরত সেই নারী জানান, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে দুজনে মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের জন্য প্রেমিকের পরিবারকে একাধিকবার বললেও রাজি না হওয়ায় ঈদের পরদিন বাড়িতে অবস্থান নিতে বলেছেন আইনজীবী সামু। তাই তিনি এসে অবস্থান নিয়েছেন।
অবস্থানের দুদিনেও প্রেমিকের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে সেই নারী আরও জানান, এতকিছুর পরও যদি আমার বিয়ে না হয়, তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর উপায় নেই।
সামিউল্লাহ সামু উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের বেলহাড়া গ্রামের জাহিদুল হকের ছেলে। ঢাকায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
আইনজীবীর বাড়িতে অবস্থানকারী ওই নারী ঠাকুরগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বাড়ি একই উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিনমারী গ্রামে।
এদিকে ওই নারীর অবস্থানের খবর শুনে পলাতক রয়েছেন সামিউল্লাহ সামু। তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সামুর বাবা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। তবে ছোট ভাই ও বাড়িতে থাকা অন্যান্য স্বজনরা জানান, রাতে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে বসার কথা রয়েছে। আশা করছি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।
ওই নারীর ভাই জানান, আমরা চাই ছেলের পরিবার সম্পর্কটা মেনে নিয়ে দুজনের বিয়ে দিয়ে ঘরে তুলুক। তাছাড়া এতবড় ঘটনার পর ওই মেয়েকে কে বিয়ে করতে চাইবে।
বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আকরাম আলী জানান, দুই পরিবারের কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম ডন দৈনিক দেশবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।উল্লেখ্য সাম্প্রতিক সময়ে এলাকার অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলোর যোগ্য ছেলে থাকলে সেসব পরিবারে বিয়ের দাবীতে কথিত প্রেমিকাদের অবস্থান নেওয়ার ঘটনা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ সময় এসব পরিবারের ছেলেরা বিয়ে করতে বাধ্য হয় এবং কিছুদিন পর বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। এজাতীয় বিয়েগুলোর অধিকাংশই ভেঙে যায়। পরবর্তীতে আদালতে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা হয়। এসব মামলায় সহজে জামিন না হওয়ার কারণে ছেলেপক্ষ মোটা অংকের টাকা দিয়ে আপোষ মীমাংসা করতে বাধ্য হয়। বালিয়াডাংগী উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, এধরণের ঘটনা ঘটে অধিকাংশ স্বচ্ছল পরিবারের ক্ষেত্রে। কোন দরিদ্র পরিবারে কেউ বিয়ের দাবিতে অনশন করার ঘটনা ঘটে না। তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধিত্বের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশবাংলাকে বলেন, কথিত প্রেমিকাদের অবস্থানের বেশীরভাগ ঘটনাই হলো চাঁদাবাজির মতো একটা ব্যাপার। আইন নারীদের পক্ষে তাই জনপ্রতিনিধিদেরও সব জেনেও কিছুই করার নেই। এলাকাবাসী এসব ঘটনার ক্ষেত্রে সত্য মিথ্যা যাচাই করে সংবাদ প্রকাশ করার দাবী জানান এবং অযথা কারো ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান।