

ইসমাইল মাহমুদঃ
১৩ জুলাই বিয়ের পিড়িতে বসার কথা ছিল মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছতিয়া গ্রামের নওশাদ মিয়ার কন্যা আয়েশা আক্তারের। ঈদের কয়েকদিন আগে উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারণ হয়েছিল। আয়েশার পরিবারের সদস্যরা তার বিয়েকে ঘিরে বুনতে থাকেন স্বপ্নের জাল। আয়েশাও সংসার ও ভবিষ্যতের স্বপ্নে ছিলেন দিবানিশি মশগুল। কিন্তু আয়েশার পরিবারের স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ঈদের আগের দিন কোরবানীর গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত আয়েশা আক্তার (১৯) আজ মঙ্গলবার ভোরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছতিয়া গ্রামের মো. নওশাদ মিয়ার কোরবানীর গরু ঈদের আগের দিন শনিবার দুপুরে প্রতিবেশী সিরাজ মিয়ার ধান খায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র নওশাদ মিয়া ও সিরাজ মিয়ার পরিবারের কথা কাটাকাটি হয়। পরে সিরাজ মিয়ার পরিবার নওশাদ মিয়ার পরিবারের উপর দেশীয় ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। অতর্কিত হামলায় নওশাদ মিয়ার পরিবারের ৫ নারী আহত হন। এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে আয়শা আক্তারসহ ৪ নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর দায়ের কুপে গুরুতর আহত আয়শা আক্তারের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয় করা হয়। আজ মঙ্গলবার ভোরে আয়েশা আক্তার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
কমলগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িতে হামলা ও দা দিয়ে কুপিয়ে ৫ জনকে আহত করার ব্যাপারে ঈদের দিন রোববার দুপুরে নওশাদ মিয়া বাদি হয়ে ৭ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সামাদ মিয়া ও সিরাজ মিয়া নামে দুই আসামিকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, পাশের গ্রামে নিহত আয়েশার বিয়ে চূড়ান্ত হয়েছিল। আগামীকাল বুধবার তার বাবার বাড়ি থেকে বিদেয় নিয়ে যাবার কথা ছিল স্বামীর বাড়িতে। কিন্তু বিয়ের আগের দিন আজ মঙ্গলবার সে চিরদিনের মতো বাবার বাড়ি থেকে বিদেয় নিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।
এদিকে আয়েশার মৃত্যুর খবর তার গ্রামের বাড়ি কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছতিয়া গ্রামে এসে পৌছলে চারদিকে শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে নিহতের বাড়িতে ঝড়ো হয়েছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। অনেকেই হৃদয় বিদারক এ মৃত্যুর ঘটনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।