
শান্তনু হাজরা, শান্তিনিকেতন, ভারত :
ভারতীয় সংবিধানে জাতীয় প্রতীক হিসাবে যে অশোকস্তম্ভ গৃহীত হয়েছিল তার নক্সা করেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু। কিন্তু, সংসদ ভবনের জন্য যে অশোকস্তম্ভ উন্মোচিত হল তার সঙ্গে মিল নেই বলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ সিংহের মধ্যে স্বাভাবিকতা নেই, হিংসা রয়েছে বলে আক্ষেপ বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক-শিল্পীদের। তারা জানান, এটি জাতীয় প্রতীক, এখানে শিল্পীর নিজস্বতা দেখানোর অধিকার নেই৷
বর্তমান কাজটি করেছেন শিল্পী লক্ষ্মণ ব্যাস ,জাতীয় প্রতীক টি ভারতের নবনির্মিত পার্লামেন্ট উপরি ভাগে বাসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ভারতের সংবিধানের নক্সা বা অনুলিপির দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসুকে৷ সেই সময় বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যক্ষ ছিলেন নন্দলাল বসু৷ জানা গিয়েছে, অশোকস্তম্ভকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সিংহের স্বাভাবিক অবস্থাকেই বেছে নিয়েছিলেন শিল্পী৷ তিনি তাঁর ছাত্রদের নিয়ে সেই কাজ শুরু করেছিলেন৷ বিভিন্ন অশোকস্তম্ভের স্কেচ ছাড়াও নন্দলাল বসু তাঁর ছাত্রদের নিয়ে কলকাতা চিড়িয়াখানায় সিংহের স্বাভাবিক অবস্থার স্কেচ করেছিলেন৷ যুক্তি ছিল, এই চার সিংহের মূর্তি ভারতকে শৌর্যবীর্য, শান্ত, শক্তিশালী, দৃঢ়তা, পরাক্রমের প্রতীক হিসাবে তুলে ধরবে। তাঁর তৈরি অশোকস্তম্ভের স্কেচ ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসাবে গৃহীত হয়৷
সদ্য নব নির্মিত সংসদ ভবনের জন্য অশোকস্তম্ভের ব্রোঞ্জ মূর্তির উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই মূর্তিতে সিংহের হিংসাত্মক রূপ প্রকাশ পেয়েছে বলে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, শিল্পী নন্দলাল বসুর তৈরি জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে মিল নেই নব নির্মিত অশোকস্তম্ভের বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদেও রয়েছেন।
তাই নব নির্মিত অশোকস্তম্ভ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক থেকে শুরু করে শিল্পীরা৷
বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক শিশির সাহানা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু শিল্পী নন্দলাল বসুকে সংবিধানের নক্সা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বহু জায়গা ঘুরে স্কেচ বানিয়ে জাতীয় প্রতীক তৈরি করেছিলেন৷ এখানে অন্য কোন শিল্পীর নিজস্বতা দেখানোর অধিকার নেই৷ কিন্তু, দেখা গেল নতুন যে অশোকস্তম্ভ হল তা আগের মত হয়নি৷ সিংহ শৌর্যবীর্যের প্রতীক রূপ ফুটিয়ে তুলেছিলেন নন্দলাল বসু, কিন্তু, সেটা হল তাতে সিংহ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই৷”
বিশ্বভারতীর নন্দন আর্ট গ্যালারির প্রাক্তন আধিকারিক তথা শিল্পী সুশোভন অধিকারী বলেন, “নন্দলাল বসু অন্য মাত্রার শিল্পী ছিলেন। জাতীয় প্রতীকে সিংহকে তিনি বীর্য, শক্তি, শৌর্যের প্রতীক হিসাবে তুলে ধরেছিলেন৷ সেখানের প্রাচীন সংস্কৃতির ছোঁয়াও আছে। কিন্তু, অশোকস্তম্ভ নির্মাণ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে সিংহের হিংসাত্মক রূপ৷ এমনকি, নিজের কারুকার্য গুলিও খুবই আধুনিকমানের হয়ে গিয়েছে। যেটা সমীচীন নয়।”
বিশ্বভারতী কলা ভবনের শিল্পী দের সাথে সাথে ভারতের লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীররন্জন চৌধূরী কটাক্ষ করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।