
আবুল হাশেম, জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজারে মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ীর পশ্চিমে অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ দায়সারা নির্মাণ কাজের কারণে সংস্কারকাজ টেকসই হচ্ছে না। এতে করে জলে যেতে বসেছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ফলে অস্তিত্ব সংকটে মাতারবাড়ী বাসিন্দারা। সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষা পেতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলেও সেই বাঁধ কোনো কাজে আসছে না। ভাঙনকবলিত স্থানেই প্রতিবছর ভাঙছে বাঁধ। প্রতিবছর তা মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। স্থায়ী সমাধান না করে শুধু বাঁধ মেরামতে অর্থের অপচয় হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষ। স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কারণে বিগত ১০ বছরে শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে বাধ্য হয়েছেন অন্যত্র চলে যেতে। অনেকে ঝুঁকি জেনেও মাথা গোঁজানোর ঠাঁই গড়ছেন বেড়িবাঁধ ঘেঁষে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের কারণে এমন ভাঙন। বারবার প্রতিবাদ করেও কোন সুরাহা মিলেনি বলে তাদের দাবি। স্থানীয়রা আরও জানান, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে টেকসই বাঁধ দেওয়ার কারণে জোয়ারের ধাক্কা সরাসরি বেড়িবাঁধে আঘাত করে। এতে বেড়িবাঁধ দূর্বল হয়ে পড়েন। ফলে সহজে এটি ধসে পড়ে। মাতারবাড়ী রক্ষার্থে তারা টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানান। রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের নয়টি স্থানে পুনরায় বড় বড় ভাঙন। পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি দুই থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধির ফলে অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ উপছে বসতভিটায় পানি প্রবেশ করছে। সর্বশেষ চার কোটি বাজেটের সংস্কারে দেওয়া জিওব্যাগসহ মাটি ধসে পড়ে গেছে। অনেকগুলো জিওব্যাগ সাগরে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি বসতবাড়ি জোয়ারের পানি প্রবেশের পাশাপাশি ভেঙে গেছে। দ্রুত সংস্কার না হলে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। পূর্ণিমার চলতি জোয়ার আরও ২ দিন থাকবে বলে জানা যায়। বেড়িবাঁধ এলাকার অধিবাসী জামাল উদ্দিন (৭৫) ‘ভাঙনের প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ তো দূরের কথা, সংশ্লিষ্টরা একনজর বাঁধটি দেখতেও আসেননি। এমনকি কোন জনপ্রতিনিধি ও কোন খুঁজ – খবর নেইনি। বর্তমানে বাঁধটি বিভিন্ন স্থানে ভাঙার পাশাপাশি অনেকটা অংশ সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দিন-রাত আতঙ্কে আছি।’ ওই এলাকার সুফিয়া বেগম (৪০) বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে ত্রাণ চাই না, দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ চাই।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে ৪ টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাড়িতে পানি ডুকছে। তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, বেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য অস্থায়ী বাঁধের কাজ করতেছি। স্থায়ী কাজ না হলে এরকম জোয়ার ঠেকানো সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা ভাঙা অংশে কাজ করতেছি। এটার জন্য সুপারডাইকের প্রকল্প দিয়ে রাখছি, তা অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন শিমুল বলেন, বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে জানা নেই। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিষয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে খোঁজ নিবেন বলে তিনি জানান।