
সেহলী পারভীনঃ
এই লেখা প্রকাশ হওয়ার মধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার কনজারভেটিভ বা টোরি দলের নেতৃত্ব অবিলম্বে ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই সাথে আগামি শরৎকালে প্রধানমন্ত্রীত্বও ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আরও হয়তো কোনো রাজনৈতিক অঘটন ঘটতে পারে যুক্তরাজ্যে। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায় ব্রিটেনের এই রাজনৈতিক সংকট বা সমস্যায় বাংলাদেশের কি সমস্যা হতে পারে? রিজার্ভের বিষয়ে বাংলাদেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে; তেমনি বাংলাদেশের মজুদ স্বর্ণের সাথে ব্রিটেন জড়িত। তাই এই দুই দেশের অর্থনৈতিক সংকট বা উত্তরণের সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতি বা টাকার সম্পৃক্ততা রয়েছে। সাম্প্রতিককালে মানবিকতার নামে মার্কিনীদের সমর্থক দেশগুলো যেভাবে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার একটি যুদ্ধ চালু করে দিয়েছে, এতে যে সমস্যাগুলো ক্রম বর্ধমান, তার মধ্য জ্বালানি সংকট, খাদ্য সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারন করতে যাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর রিজার্ভ, সম্পদ ও স্বর্ণের মজুত বা গ্যারান্টর প্রথম বিশ্বের বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হওয়ার কারনে কৌশলে এর চাপটি পরে এই গরীব দেশগুলোর উপরেই। এই দুটো দেশ যেকোন ভাবেই হোক নিজেদের অর্থনীতি সামলে নেয় অন্যের সম্পদের উপর দিয়ে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে এসে যুক্তরাজ্য এই প্রথম সরাসরি একটি ধাক্কা দিতে পেরেছে ইউকে। ইউক্রেনের যুদ্ধ কোনভাবেই ইউকে কে লাভবান করেনি। উল্টো ফ্রি যুদ্ধাস্ত্র ও অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়ার পাশাপাশি প্রায় ৭ মিলিয়ন শরণার্থী নিজেদের কাঁধে নিতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র অল্প কিছু শরণার্থী নেয়ার পরে আইনি কৌশলে নতুন শরণার্থী প্রবেশে বিধিনিষেধ দিয়েছে। দেরিতে হলেও ব্রিটিশরা বুঝতে পেরেছে টার্কিশ বংশোদ্ভূত বরিস জনসন তাদের জন্য কোন মঙ্গল বয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ইইউ ত্যাগ করার পেছনে অন্যতম কারিগর এই বরিস জনসন যা ব্রিটেনকে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই পেছনে ফেলেছে বলে ব্রিটিশ জনগণ মনে করছে। উল্লেখ্য বরিস জনসনের দাদার বাবা আলী কামাল তুরস্কের মন্ত্রী ছিলেন। একনজরে এই পর্যন্ত বরিস জনসনকে হটাতে যারা পদত্যাগ করেছেনঃ চ্যান্সেলর বা অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের পদত্যাগের পর ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। দুই মন্ত্রীকে অনুসরণ করে একদিনে ১৬ মন্ত্রী সরকার ছাড়ার পথ বেছে নেন। এর আগে ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বরে একদিনে ১১ মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, মন্ত্রীদের পাশাপাশি কনজারভেটিভ দলের এমপিরাও পদত্যাগ করছেন। টিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তার মন্ত্রী ও সহযোগীদের ৫৩ জন এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ একটি সংবাদ হচ্ছে ইউরোপ একটি সম্ভাব্য খরা মোকাবেলা করতে যাচ্ছে যা আগামি কয়েকমাসের মধ্যে প্রকট হবে। তবে খরা নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও কয়েক মাসের মধ্যেই বিষয়টি প্রকট হতে শুরু করবে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা যাচ্ছে।