

মো: সোহাগ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগে পল্লবী থানাই বারবার কেন সেরা পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়? কী এমন যাদু জানেন অফিসার ইনচার্জ পারভেজ ইসলাম। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারাই বা কেমন তৎপর থাকেন? এসব নিয়ে অন্যান্য থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যেও রয়েছে নানা কৌতুহল। এমন প্রশ্নের জবাবে অফিসার ইনচার্জ পারভেজ ইসলাম মৃদু হেসে বলেছেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব কোনো বাহাদুরী নেই। ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী মিরপুর বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মহোদয় যে রুটিন ওয়ার্ক বেধে দেন তা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে পালনের চেষ্টা করি আমরা। তাতেই সুফল মেলে, তাতেই জোটে ব্যতিক্রমী সম্মাননা।’
তবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায়, মাদকের বিরুদ্ধে আপোসহীন ভূমিকা আর গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের ক্ষেত্রে পল্লবী থানার সর্বোচ্চ তৎপরতা নিশ্চিত করেন পারভেজ ইসলাম। পাশাপাশি বিট পর্যায়ে দিন রাত টহল কাজে কোনো গাফিলতি মানেন না তিনি। সর্বোপরি পুলিশ কর্মকর্তাদের চমৎকার সমন্বয়ই সেরাদের সেরায় পরিনত করেছে পল্লবী থানাকে।
বিগত ২৭-০৫-২০২১ ইং তারিখে রাজধানীর বাড্ডা থেকে পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের পর পারভেজ ইসলাম সেরা মুকুটটি প্রথম ছিনিয়ে আনেন একই বছর সেপ্টেম্বরে। ডিএমপির শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে পল্লবী থানার নাম ঘোষণা হওয়ায়, ডিএমপির কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার) এর দেয়া পুরস্কার, মিরপুর বিভাগের তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন পিপিএম এর কাছ থেকে গ্রহণ করেন ওসি পারভেজ ইসলাম। এরপর থেকেই আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ওসি পারভেজ ইসলামের। এরই ধারাবাহিকতায়, নভেম্বর ২০২১, ডিসেম্বর ২০২১, জানুয়ারি ২০২২, এপ্রিল ২০২২, মে ২০২২, জুন ২০২২, জুলাই ২০২২, আগষ্ট ২০২২, অক্টোবর ২০২২, জানুয়ারি ২০২৩, মিরপুর বিভাগের শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে শিরোপা জয় করেছে পল্লবী থানা। শুধু থানা পর্যায়েই নয়, পল্লবী ফাঁড়ি পর্যায়েও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে সবাইক তাক লাগিয়ে দিয়েছে পল্লবী থানারই সাব ইন্সপেক্টর সজীব খান।
এছাড়াও মিরপুর বিভাগের বর্তমান উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ জসীম উদ্দীন মোল্লার কাছ থেকে একাধিকবার পুরস্কার, ও ক্রেস্ট গ্রহণ করেছেন ওসি পারভেজ ইসলাম। থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মুহাঃ আহাদ আলী ও ইন্সপেক্টর (অপারেশন) উদয় কুমার মন্ডলও শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে একাধিকবার পুরস্কার ও ক্রেস্ট গ্রহণ করেছেন।
পল্লবী থানার বর্তমান চলমান নানা সফলতার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বিহারী ক্যাম্পগুলোর সীমাহীন বিশৃঙ্খলাকে নিয়ন্ত্রণ আনার ব্যবস্থা নেয়া। যুগ যুগ ধরেই অপরাধ অপকর্মের অপ্রতিরোধ্য আখড়াস্থল হিসেবে চিহ্নিত ছিল পল্লবীর মিলাদ ক্যাম্পসহ ছোট বড় বিহারী ক্যাম্পগুলো। সেখানে হাত বাড়ালেই মিলতো মাদক, ছিল অস্ত্রশস্ত্রের ঝনঝনানি। রাত দিন অবাধে চলতো মাদক সেবনের বেহাল চিত্র। যখন তখন সংঘাত সংঘর্ষ, অস্ত্র মহড়া, কিশোর গ্যাংয়ের দাপট দেখতে পেতেন বাসিন্দারা, রীতিমত জিম্মিদশায় কাটতো বাসিন্দাদের জীবন। সেখানে বারবার মিটিং করে, ক্যাম্প পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির নানা উদ্যোগ নেন ওসি পারভেজ ইসলাম।
শুরুতেই গ্রেফতার, মামলা দায়ের, হাজতে পাঠানোর মতো আইন প্রয়োগের পরিবর্তে মহল্লা এমনকি পরিবার পর্যায়ে অপরাধমুক্ত জীবন ব্যবস্থায় আগ্রহী করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালান তিনি। এতে অল্প সময়েই এলাকার অভিভাবকরা হয়ে উঠে পুলিশের বন্ধুজন। ফলে অভাবনীয় সফলতা মেলে। দাগী অনেক অপরাধীও আইনি স্বচ্ছতায় জীবন গড়তে এগিয়ে আসে। একে একে উচ্ছেদ হতে থাকে চিহ্নিত মাদক আখড়াগুলো।
পল্লবীতে মাদকের আতুরঘর মিল্লাত ক্যাম্পসহ অন্যান্য বিহারী ক্যাম্পে মাদক নিয়ন্ত্রণে অসামান্য ভুমিকা রাখায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা বারবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে এসআই কাজী রায়হান, গাড়ি উদ্ধারে এসআই আতাউল, কর্মদক্ষতা ও সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট তামিলকারী হিসেবে এসআই সজিব খান সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মদক্ষতা, নিরলস পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে যারা বিভিন্ন সময়ে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও নগদ অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন তারা হলেন, এসআই সজিব, এসআই এনায়েত, এসআই আনোয়ারুল ইসলাম, এসআই জহির উদ্দিন, এসআই শফিকুল ইসলাম, এসআই আনোয়ার হোসেন, এসআই পার্থ, এসআই শফিকুল ইসলাম, এসআই আজাদ, এসআই কামরুল, এসআই তারিক উর রহমান শুভ, এসআই এম মাহমুদ, এসআই উজ্জল, এসআই মোঃ সাইফুল ইসলাম, এসআই আজিজুল, এএসআই সোহেল মহিউদ্দিন, এএসআই ফেরদৌস রহমান, এএসআই হরিদাস, এএসআই ফেরদৌস, এএসআই হরিদাস, এএসআই মোঃ ফয়সাল হোসেন, এএসআই ফেরদৌস রহমান।
তবুও সমস্যা থেকেই যায়, তা হলো ভাসমান অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। বিভিন্ন পয়েন্টে ঝটিকা বেগে হানা দিয়ে ছিনতাই সংঘটন করেই হাওয়া হয়ে যাওয়া অপরাধীদের দমনে আলাদা পরিকল্পনা করেন ওসি পারভেজ ইসলাম ও তার অধিনস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। বিট পর্যায়ে পুলিশি টহল বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সাদা পোশাকে তৎপরতাও তৎপরতাও নিশ্চিত করতে থাকেন। এর প্রেক্ষিতে কয়েক মাসের মধ্যেই সুফল পেতে থাকেন আপামর পল্লবীবাসী। তাদের সন্তষ্টিতেই একে একে সেরাদের সেরা হিসেবে পুরস্কৃত হয় টিম পল্লবী।

