

আতোয়ার রহমন রানাঃ
সময় ছিল আষাঢ় মাস।প্রতি দিনের মতো জয়ন্ত পোস্ট মার্টাম এর কাজ শেষে ঠিক রাত্রি ১২ টার পর বাড়ী আসেন।কিন্তু একদিন পোস্ট মার্টাম এর কাজ নেই তাই জয়ন্ত অফিসে বসে বসে পুরোনো ফাইল গুলো খুলে দেখছেন এই জীবনে কত গুলো পোস্ট মার্টাম করেছেন। ফাইল গুলো দেখতে দেখতে কখন যে ঘড়ির কাটায় রাত ২ টা পার হয়েছে তা জানতেই পারেনি। হঠাৎ তার ফোনে কল আসে ডা রুবেল স্যার এর ফোন রিসিভ করলে স্যার বলেন জয়ন্ত একটা পোস্ট মার্টাম এর কাজ আছে সদর হাসপাতালের পুরাতন পোস্ট মার্টাম রুমে।জয়ন্ত বললো ঐ দিকে পোস্ট মার্টাম এর সব যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক আছে তো স্যার।ডা রুবেল বললো হ্যাঁ সব ঠিক আছে চিন্তার কারণ নেই।
এরপর জয়ন্ত তার রেইনকোর্ট টি পরে সাইকেল নিয়ে গন্তব্যে দিকে চললেন।কারণ রাতটি ছিল আষাঢ় মাসের তাই আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এবং টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু জয়ন্ত বৃষ্টিতে ভিজে অন্ধকার রাতে কাঁপতে কাঁপতে সাইকেল চালিয়ে স্যারের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছালেন।পোস্ট মার্টাম রুমের দরজায় গিয়ে পকেট এ থাকা ফোন বের করে দেখেন রাত্রি ৩ টা। অন্যদিকে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এবং বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর। সাইকেলটি পোস্ট মার্টাম রুমের দরজার সামনে রেখে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন।দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে জয়ন্ত দেখতে পেলেন পোস্ট মার্টাম রুমটি মনে হয় বহু বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে আছে। এরপর জয়ন্ত পোস্ট মার্টাম এর পোশাক পড়ে রুমের চারপাশে তাকিয়ে দেখে একটু চিন্তা করলেন তার পোস্ট মার্টাম জীবনে এমন জরাজীর্ণ পুরাতন রুমে কখনো লাশ পোস্ট মার্টাম করেনি।তারপর রুমে থাকা লাইট গুলো অন করার জন্য সুইচ এর দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু হঠাৎ করে রুমের ভিতরে গুন গুন গুন করে একটি সাইন্ড শুনতে পেলেন।জয়ন্ত ভয় না করে রুমের লাইন অন করে রুমে থাকা সাদা কাপড় দিয়ে পেছানো লাশটি পোস্ট মার্টাম টেবিলে রাখলেন।তারপর চকচকে চাকু নিয়ে লাশটির মুখে থাকা কাপড় সরাতেই লাশটি মনে হয় জয়ন্ত দিকে তাকিয়ে আছে।জয়ন্ত একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো লাশে দিকে মনে হচ্ছে এখনো বুঝি দেহে জীবন আছে।লাশ থেকে দৃষ্টি সরাতেই হঠাৎ করে রুমের লাইট অপ অন হচ্ছে আর রুমে গুনগুন করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।জয়ন্ত তখন রুমের চারপাশে তাকিয়ে বললো কে কে কে রুমে।জয়ন্তর ডাক শুনে আওয়াজ বন্ধ হলো।
এদিকে রুমের লাইট অপ হয়েছে তখন জয়ন্তর পকেটে থেকে ফোন বের করে ফোনের লাইট লাশের দিকে ধরলো।ততক্ষণে লাশটি পোস্ট মার্টাম টেবিলের উপরে নেই।তখন জয়ন্তর মাঝে ভয়ে গলা শুকে শরীর নিথর হয়ে আসলো। আবার রুমে এক কোন থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে শুরু করলো।এবার জয়ন্ত মনকে স্থির করে পোস্ট মার্টাম টেবিলে দিকে এগিয়ে গিয়ে মৃত্যু লাশটিকে বললো তোমার উপরে যে খারাপ আত্মা ভর করে আছে আমি সেটাতে তোমার দেহ কে মুক্তি দিবো।এরপর চাকু দিয়ে লাশটির বুক ফেরে পোস্ট মার্টাম শুরু করল।লাশটির পোস্ট মার্টাম শেষে জয়ন্ত বুঝতে পারল কিছু খারাপ লোকের দ্বারা মেয়েটি জীবিত সময়ে ধর্ষণ এর শিকার হয়েছে। তাই পোস্ট মার্টাম এর সময় তার উপরে ভর করা খারাপ আত্মার কারণে লাশটির আত্নাটি চিৎকার করছিল।পোস্ট মার্টাম শেষ করে জয়ন্ত সেই রাতেই তার স্যার কে রিপোর্ট দেবার জন্য চেম্বারে চলে গেলেন আর এ দিকে পুরাতন জরাজীর্ণ পোস্ট মার্টাম রুমে লাশটি পড়ে রইল।