
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে থাকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া চমন গত মঙ্গলবার ১২ই জুলাই করিমগঞ্জের তালিকাভুক্ত রাজাকার মজিদ হাজীর বাড়ীতে দাওয়াত খেয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে গত ১৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ বলছেন একজন যুদ্ধাপরাধী মামলার প্রসিকিউটর কি করে রাজাকারের বাড়ীতে দাওয়াত খেয়ে গেলেন। তিনি রাজাকার মজিদ হাজীর নাতী করিমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতির বাড়ীতে দাওয়াত খেতে পারেননা। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে রেজিয়া চমন বেশ কয়েকবার করিমগঞ্জে এসেছেন সরকারের সর্বোচ্চ প্রটোকলে। নিজ নানীর বাড়ী করিমগঞ্জে। নানীর বাড়ীর ওয়ারিশ পাবেন বলে তিনি তা উদ্ধারের জন্য এ প্রটোকলে আসেন।
পারষ্পরিক বলাবলি করেন যে, নানীর বাড়ীর জায়গা জমির খোঁজ নিতে গিয়ে নাকি হেন্তস্থার শিকার হয়েছিলেন। তাই জনগন ভাবছেন যে এ কারনে তিনি প্রশাসনের প্রটোকল নিয়ে বার বার করিমগঞ্জে আসেন। রেজিয়া চমনকে এই রাজাকারের বাড়ীতে দাওয়াত খাওয়ার কথা বল্লে তিনি বলেনঃ আমি যখন হেন্তস্থার শিকার হই তখন আমার পাশে কেহ দাঁড়ায়নি। এখন কে রাজাকার, কে রাজাকার না তা আমি চিনিনা। এ ব্যাপারে বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, “স্বাধীনতা বিরোধীদের বাড়ীতে দাওয়াত খাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী কাজ”।
করিমগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির স্বপন ভান্ডারী বলেন, “প্রসিকিউটর রেজিয়া চমন এমন তালিকা ভুক্ত রাজাকারের বাড়ীতে রাষ্টীয় প্রটোকলসহ দাওয়াত খাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। তিনি ব্যক্তিগত কাজে প্রটেকশন নিয়ে সেখানে দাওয়াত খেতে পারেন না। রেজিয়া চমনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক”।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষি মোঃ গোলাপ মিয়া বলেন, আমরা স্বাধীনতা বিরোধীদের অপকর্মে শাস্তির জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছি। এখন তারা যদি স্বাধীনতা বিরোধীদের বাড়ীতে দাওয়াত খান তখন আমাদের নিরাপত্তা থাকে কোথায়???
উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর রেজিয়া চমন গত ১১ই জুলাই সোমবার কিশোরগঞ্জে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউজে রাত্রি যাপন করেন। পর দিন ১২ই জুলাই মঙ্গলবার নানী বাড়ীর খোঁজ খবর নিতে এসে রাজাকারের তালিকাভুক্ত মজিদ হাজীর বাড়ীতে দাওয়াত খান। আরও উল্লেখ্য বিষয় হলো এ সময় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নাসির উদ্দিন ও সামছুদ্দিনের আপন ভাই অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন এতে উপস্থিত ছিলেন। করিমগঞ্জের ইটালি মার্কেটে নিয়ে এসে দুপুরের খাবার খাওয়ান। রেজিয়া চমনের ভাই পারভেজ এতে প্রায় ২৮০০/- টাকার বিল পরিশোধ করেন। সবগুলোর ক্ষেত্রে সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেন যুবদলের এক নেতা ও তার ভাই।
সুধী মহলে ও রাজাকারের বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষীদের মনেও তা নিয়ে বিরোপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাক্ষীগন বলেন, আমরা জীবন বাজী রেখে রাজাকারদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছি আর এখন সরকারী প্রটেকশন নিয়ে যদি প্রসিকিউটরগন এই স্বাধীনতা বিরোধীর বাড়ীতে দাওয়াত খান ও নানী বাড়ী সম্পদ আদায়ে সচেষ্ট হন তাহলে এ ট্রাইব্যুনালের প্রতি ভক্তি বিশ্বাস আর থাকেনা। আমাদেরও পরবর্তী সময়ের জন্যও এটা উদ্বেগের কারন হতে পারে। কেননা আমাদের সাক্ষীর কারনেই করিমগঞ্জের যোদ্ধাপরাধীরা ফাঁসির দন্ডে দন্ডীত হয়েছেন। এ জন্য আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। আমাদের তো কোন প্রটেকশন নেই। তাহলে আমরা যাব কোথায়?।
অভিযোগের কপিটির অনুলিপি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কসহ বিভিন্ন দপ্তরে।