
মাসুদ লস্কর :
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। দেশের উন্নয়নে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৮৭৯ কোটি ৩১ লাখ (৮.৭৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের এই পাঁচ মাসে ৮ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। যা রেকর্ড পরিমান।
একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে পাসপোর্ট তৈরি করতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
দেখা যায় অনেক প্রবাসী দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশে থাকার কারনে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার সময় তাদের অনুপস্থিতিতে বাড়ি থেকে তাদের নাম ঠিকানা নিয়েই লিপিবদ্ধ করে ভোটার করা হয়েছে। এতে করে সঠিক নাম ঠিকানা সহ জন্মতারিখে প্রচুর ভুলের প্রমান পাওয়া যায়।
বিশেষ করে প্রবাসীরা দেশের বাইরে যাওয়ার সময় হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাস যাত্রা করেছে। তখনকার সময়ে জন্মসনদ ও ছিল হাতে লেখা।
প্রযুক্তির বিকাশের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশ ডিজিটাল হয়েছে। ফলে জন্মসনদ থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয় পত্র সর্বোপরি পাসপোর্ট ও ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। তাছাড়া বহি:বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এখন ডিজিটাল পাসপোর্টের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কাজেই বাধ্য হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট তৈরী ও নবায়ন সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে ও বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় পাসপোর্ট তৈরি ও সংশোধন করতে জাতীয় পরিচয় পত্রের দরকার। জানা যায় ভুলে ভরা জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে পাসপোর্ট করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই ভুক্তভোগীরা জাতীয় পরিচয় পত্রের সংশোধন করতে ছুটে চলেন স্হানীয় নির্বাচন অফিসে। অনলাইনে আবেদনও করে। কিন্তু বিধি বাম কথিত সার্ভার সমস্যার কারনে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। একদিন দুইদিন তিনদিন বাধ্য হয়ে কথা বলেন অফিসের কিছু নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীর সাথে, ওদের ভাষায় এভাবে জীবনেও আপনার আইডি কার্ড সংশোধন হবে না। খরচ দিন স্যারকে দিয়ে করিয়ে নিব। কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে ওরা ২০/৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়ে বসে।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের ছাতিয়াইন গ্রামের রেমিট্যান্স যোদ্ধা কাশেম মোল্লার জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্মতারিখটি ভুল হওয়ায় সংশোধন করতে যায় স্হানীয় নির্বাচন অফিসে, সে জানায় গত ৫/৬ মাস আগে আবেদন করে বার বার মাধবপুর নির্বাচন অফিসে ধর্না দিচ্ছে। কিন্তু অফিস থেকে জানায় আইডি কার্ড সংশোধন করতে হলে তাকে সিলেট থেকে করে আনতে হবে এতে খরচ হবে ২০/৩০ হাজার। এর সত্যতা যাচাই করতে পরিচয় গোপন রেখে প্রতিবেদক চলে যায় সিলেট বিভাগীয় নির্বাচন অফিসে। অফিসের এক কর্মচারী খ্যাত দালালের সাথে দরকষাকষির ফলে ১০ হাজারে সংশোধন করে দিবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়।
সুয়েব মীর ছাতিয়াইন ইউনিয়নের শিমুলঘর গ্রামের প্রবাস ফেরত রেমিট্যান্স যোদ্ধা তার ও একই অবস্থা। ৫/৬ বছর বিদেশে থেকে দেশে এসে পাসপোর্টের কারনে আর যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শিমুল ঘর গ্রামের শেখ ফরহাদ আহামেদ অনলাইনে সংশোধনের আবেদন করে কিন্তু দেখা যায় সংশোধনীতে ও আবার ভুল। যার ডকুমেন্টস প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
দেখা যায় কারো নামে ভুল আবার কারো পিতামাতা কিংবা জন্মতারিখ সংশোধন করতে উপযুক্ত প্রমান দাখিল ছাড়া উপায় নেই। এস,এস,সি পাশ সনদ না থাকলে তো বিড়ম্বনার শেষ নেই। এই দাও,সেই দাও অবশেষে কোর্ট এভিডেভিড। তাতেও কাজ হয় না। বলতে শুনাযায় কোর্ট এভিডেভিড এ যে কলাপাতা!
সকল ঝক্কিঝামেলা শেষ, এখন আবার সার্ভার সমস্যা। খুজ নিয়ে জানা যায় চুক্তিমত টাকা দিলে সার্ভারে আর সমস্যা থাকে না।
সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে সাধারনের সুবিধার্থে উপজেলা /থানা নির্বাচন অফিসগুলো পরিচালনা করছে। এর পর ও যদি জনগণকে দূর্ভোগ পোহাতে হয় তবে জনগন যাবে কোথায়। আর এসব সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নয়তো?