
নিউটন চাকমা, কাউখালী প্রতিনিধি (রাঙামাটি):
চারিদিকে পাহাড়, প্রকৃতির গুঞ্জনের শব্দ, কিচিরমিচির পাখিদের কোলাহলের অনুভূতি আর ঝর্ণার ঝিরিঝিরি পানির শব্দে মন উতালপাতাল করে বলে ঝর্ণায় ঘুরতে আসা একজাঁক পাহাড়ি বাঙ্গালী তরুনদের অনুভুতির কথা ব্যক্ত করেছেন।
বিগত ২ বছরের অধিক সময় ধরে দেশের করোনার প্রার্দুভাব ও সংক্রমণের বৃদ্ধিতে দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত বছর ১৯ আগষ্টের পর সকল পর্যটন স্পট উম্মুক্ত করায় রাঙামাটিতে সব পিকনিক স্পটগুলোতে পর্যটকদের আগমন ঘটছে। রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, সুভলং ঝর্ণা, ঘাগড়া ঝিরি ঝর্ণা, বিলাইছড়ির গাছ কাঁটা ছড়া ঝর্ণা, রাঙামাটির সাজেক ভ্যালী, পেডা টিং টিংসহ আরো অনেক কিছু ভ্রমন ও পর্যটন প্রেমীদের দর্শনীয় স্থান। তবে সব ক’টির মধ্যে ঘাগড়া ঝর্ণাটি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একেবারে সন্নিকটে অবস্থিত। এ ঝর্ণাটি পর্যটন কর্পোরেশন বা সরকারের সহযোগিতায় গড়ে উঠতে পারে পর্যটকদের একটি সুন্দর পর্যটন স্পট কেন্দ্র। ঘাগড়া ঝর্ণাটি পুরো বর্ষা ও শীত মৌসুমেই পর্যটকদের পরিপূর্ণতায় ভরপুর হয়ে উঠে। তবে এবারের ঈদের ছুটি ও স্কুল-কলেজে বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ঘুরতে আসছেন ঘাগড়া ঝিরি ঝর্ণাটি দেখতে এবং উপভোগ করতে। পর্যটকদের পদচারণায় পরিপূর্ণতায় ফিরে পেয়েছে ঘাগড়া ঝিরি ঝর্ণাটির তার প্রকৃতির রূপ।
চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি থেকে ঘুরতে আসা রওশান আরা ও ত্রয়া চাকমার সাথে কথা হলে তারা জানান, এই বছর বর্ষা মৌসুমে ঈদ উপলক্ষে কলেজ বন্ধ থাকার সুবাদে ঘাগড়া ঝর্ণাটি ঘুরাঘুরির সুযোগটা হয়েছে। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে করোনার সংক্রমনের কারনে তেমন ঘুরাফেরা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এই বছরে দু’দিকে দীর্ঘ ছুটি থাকায় ঘুরতে অনেকটা সময় হয়েছে। তাই বন্ধুদেরকে নিয়ে অনেক মজা করছি।
এদিকে, এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘাগড়া ঝর্ণাটি বর্ষা ও শীত মৌসুমেই পর্যটকদের আসা-যাওয়া খুব বেশী। বর্ষা মৌসুমে এই ঝর্ণাটি দেখতে হাজারো পর্যটকদের ভীড় জমতে থাকে। তাদের আগমনে স্থানীয়দের মধ্যে কোলাহলের অনুভূতি দেখা দেয়। পর্যটন প্রেমীদের পদচারণে এলাকার স্থানীয়দের দোকানে ব্যবসার সুফল বয়ে আনে। সুতরাং এই ঘাগড়া ঝিরি ঝর্ণাটি সরকারের সহযোগিতায় গড়ে উঠতে পারে পর্যটন স্পট। সেজন্য এ ঝর্ণাটির আশপাশে পিকনিক স্টপের জন্য বিশ্রামাগার তৈরী করা হলে আরো পর্যটক প্রেমীদের প্রশান্তির ছোঁয়া লাগতো। এজন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ঘাগড়া ঝর্ণাকে পর্যটনশিল্পে বিকশিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঘাগড়া ঝর্ণাটি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলাধীন ৩নং ঘাগড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কলাবাগানস্থ এই ঝর্ণাটি অবস্থিত।
এব্যাপারে ৭নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য পুর্ণ্যধন চাকমার সাথে কথা বলে এ প্রতিবেদককে জানান, ঝর্ণায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধা অসুবিধা দেখভালের জন্য আমাদের দায়িত্ব। তারা যেন এখানে এসে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য এলাকাবাসীদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ঘাগড়া ঝর্ণাটি সরকারি সহযোগিতা পেলে গড়ে উঠতে পারে স্বয়ংসম্পুর্ণ একটি পর্যটনকেন্দ্র। সেজন্য এই ঝর্ণাটি যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি পর্যটক প্রেমীদের সুবিধার্থে পিকনিক স্পটকেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। পাশাপাশি এ পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের বর্হিবিশ্বের পর্যটক পিপাসু বিদেশীদেরকে উৎসাহিত ও উদ্ভুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরতে আসা বিদেশীদেরকে উম্মুক্ত করা হলে পর্যটন শিল্প আরো এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।
ঈদের ছুটি ও ঈদ উপলক্ষে ঘাগড়া ঝর্ণাটি এক পলক দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার যুবক-যুবতীরা। অনেকে সুযোগ পেলেই ঘুরতে যান ঘাগড়া ঝর্ণাটি কিছু সময় কাটানোর জন্য। এ ঝর্ণাটি আধুনিকায়ন ও সৌর্ন্দয্য বর্ধন করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গড়ে উঠতে পারে এক নৈস্বর্গিক পর্যটন পিকনিক স্পট।