
সম্রাট হোসেন শৈলকুপা ( ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রামগঞ্জে চলছে সুদে কারবার। এই সুদে কারবারের গোলকধাঁধায় পড়ে ইতি মধ্যে শৈলকুপায় নিঃস্ব হয়েছে শত শত মানুষ। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে সুদে কারবারীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য। পালিয়েও বাঁচতে পারিনি সবাই, অনেকেই করেছেন আত্মহত্যা।
শৈলকুপা উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামের পল্লী চিকিৎসক হাসান আলী সুদে কারবারীদের নিকট থেকে কিছু টাকা ঋণ নেয়। প্রতি হাজারে মাসে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা সুদে টাকা গুলো নেয়। আসলের কয়েক এক গুণ বেশি টাকা পরিশোধ করলেও, সুদে কারবারীরা আরো টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এক পর্যায়ে হাসান বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার পর সুদে কারবারীরা হাসানকে খুঁজে বের করে তাকে তুলে এনে হাত পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।এক পর্যায়ে হাসানের হাত পা বাঁধা অবস্থায় জি. কে. সেচ প্রকল্পের খালের পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। হাসান সুস্থ হওয়ার আগেই তার নামে ঝিনাইদহ কোর্টে চেক জালিয়াতি করার একাধিক মামলা দিয়েছে এই চক্র। হাসান জীবণ বাঁচাতে আজো বাড়ি ছাড়া।
শুধু হাসান নয় একই ভাবে বাড়ি ছাড়া একই উপজেলার দুধসর গ্রামের চা দোকানদার সাঈদ বিশ্বাস, বেড়বাড়ি গ্রামের চা দোকানদার ইতাহার বিশ্বাস, গাড়াগঞ্জের বিখ্যাত তেল ব্যবসায়ী মোঃ কুদ্দুস হোসেন। এছাড়াও একই উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন, সারুটিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৩০/৪০ জন মানুষ কয়েক বছর ধরে বাড়ি ছাড়া।
গোপনে তথ্য নিয়ে জানা যায়, সুদে কারবারীরা সপ্তাহে হাজারে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত সুদ নেয়। আর একবার সুদে করে টাকা নিলে জীবনেও তা পরিশোধ হয় না। ১ সপ্তাহ টাকা দিতে না পারলে পরের দিন টাকা ডাবল হয়ে যায়।এর নাম দিয়েছে স্থানীয়রা কারেন্ট সুদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সুদে কারবারী বলেন তারা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করেই সুদে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুদে কারবারীরা টাকা দেওয়ার সময় খোলা একটা ব্যাংক চেক ও সাদা স্টাম জমা রাখেন পরে টাকা পরিশোধ না করলে ইচ্ছে মত টাকা বসিয়ে মামলা করেন। একই উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের দিনমজুর মোজাহার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে সপ্তাহে ৫০০ টাকা সুদে করে ৫০০০ হাজার টাকা নেয় একই গ্রামের আলতুর নিকট থেকে। ৩ মাস পর সুদ সহ আসল ফেরত দেয়৷ কিন্তু টাকা নেওয়ার সময় একটা খালি চেক প্রদান করেন। পরে ঐ চেক হারিয়ে গেছে বলে দাবি করে আলতু আর ফেরত দেয়নি। ২০২২ সালে এসে সজীব নামের একটা ছেলে ঐ চেকের বিনিময় ৯ লক্ষ টাকার একটি মামলা দায়ের করেছে ঝিনাইদহ কোর্টে। আলতু, সজীব সহ তার সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যরা মিলে ৬ জনের নামে ৫০ লক্ষ টাকার মামলা দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের কয়েক বছর আগেও কিছুই ছিলোনা এখন তারা লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক।
উপজেলার ভাটইবাজার, শৈলকুপা, গাড়াগঞ্জ, কাতলাগাড়ি, শেখপাড়া, দিগনগর, হাটফাজিলপুর, রয়ড়া, ধাওড়া এলাকার বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার ছত্র ছায়ায় গড়ে উঠছে সুদে কারবারদের এক মহা রাজত্ব। ভয়ে মুখ খুলছেনা কেও, এমন কি থানায় অভিযোগ দিতেই ভয় পান সাধারণ মানুষ। এখন পর্যন্ত থানায় সাঈদ ছাড়া কেও অভিযোগ করেনি।
গত কয়েক বছরে একই উপজেলার দহকোলা গ্রামের ইতাহার, গাড়াগঞ্জের আরজু, শ্রমিক লীগ নেতা চাঁদপুর গ্রামের কালাম হোসেন এবং বালীয়াডাঙ্গা গ্রামের একই পরিবারের দুইজন সহ কাতলাগাড়ি ও ধাওড়া বাজার এলাকার মোট ৭ জন আত্মহত্যা করে মারা গেছে।
এই ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন আসলে সুদ খোরদের বিরুদ্ধে কেও অভিযোগ দেয়নি। যদি কেও অভিযোগ দেয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।