
সাতক্ষীরা থেকে সংবাদদাতা:
আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা চলাকালে বর্তমান ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে সাবেক ইউপি সদস্য ও ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় সাবেক ইউপি সদস্যের ভতিজাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে উভয়পক্ষের ২৯ জন। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ওই কার্যালয়টি। শুক্রবার বিকেল ৬টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের ট্যাংরাখালি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার ট্যাংরাখালি গ্রামের আবুল হোসেন গাজীর ছেলে আমির হোসেন গাজী (২৮) ও একই গ্রামের ছাকাত শেখ এর ছেলে আব্দুল কাদের (৫০)।
শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক ও ট্যংরাখালি ৮নং ওর্যার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল বারী জানান, আওয়ামী লীগ কর্মী ও তার সমর্থক ইটভাটা শ্রমিক সর্দার ট্যাংরাখালি গ্রামের আব্দুল কাদের এক বছর আগে স্থানীয় আরশাদ আমিমনের মোড়ের মিস্ত্রী রেজাউল ইসলামের কাছে একটি সিলিং ফ্যান মেরামত করতে দেয়। এ সময় তাকে ৩০০ টাকাও দেওয়া হয়। ফ্যানটি দীর্ঘসময়ে মেরামত করে না দেওয়ায় বৃহষ্পতিবার বিকেলে রেজাউল ও কাদেরের মধ্যে বচসা হয়। বচসার একপর্যায়ে তার সমর্থক ও বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টুর সমর্থকদের মধ্যে হাতহাতির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সকালে ট্যাংরাখালি বাজারে এলে লাল্টু সমর্থকরা তার সমর্থক নাজির আলীকে মারপিট করে।
আব্দুল বারী আরো জানান, আসন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিসে তার সভাপতিত্বে বিশেষ সভা চলছিল। সোয়া ছয়টার দিকে বর্তমান ইউপি সদস্য বিএনপি কর্মী আব্দুল হামিদ লাল্টুর নেতৃত্বে তার বড় ভাই ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আনিছুর রহমান, লাল্টুর ছেলে মোখলেছুর রহমান মিলন, মেহেদী হাসান,কালিঞ্চি ইউপি সদস্য আজগার আলী বুলু, র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণকারি বনদস্যু ট্যাংরাখালি গ্রামের আব্দুল অলিম, মিকাইল হোসেন, মাদক মামলার আসামী ছাদেক, ভাই আব্দুল কাদের, সোবহানসহ শতাধিক লোক হাতে দা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢোকে। এ সময় হামলাকারিরা তার ভাইপো আমীর হোসেন, আব্দুল কাদের, আব্দুল হান্নান, আফছার গাজী, ইব্রাহীম গাজী, ইমান আলী গাজী, আক্তার আলী গাজী, আলমগীর কয়াল, মোস্তফা গাজী, আব্দুস সোবহান, নুরুজ্জামান গাজী, আব্দুল আলিম মাঝি, রউফ গাজী ও ছিদ্দিক গাজীসহ কমপক্ষে ২২জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। ভাঙচুর করা হয় আওয়ামী লীগ অফিস। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আমির হোসেন ও আব্দুল কাদেরসহ ২০জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমির হোসেনকে কতর্ব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। গুরুতর জখম আব্দুল কাদেরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার রাতে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১২জনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা তারক চন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশ ও শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক মোমরেজ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থতি শান্ত করে।
নিহত আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুস সোবহান জানান, খুলনা মডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার বাবার চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। শনিবার বাবার লাশ মংনা তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার সকালে আব্দুল হামিদ লাল্টুর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ছেলে মেহেদী হাসান বাবু বলেন, পূর্বের বিরোধকে কেন্দ্র করে বারী সমর্থকরা তার বাবা লাল্টু সমর্থকদের হামলা করার চেষ্টা করলে গ্রামবাসি খবর পেয়ে ওই লাঠিশোঠা কেড়ে নিয়ে বারি সমর্থকদের পিটিয়ে গ্রামছাড়া করে। তবে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে তিনিসহ তাদের পক্ষের সমর্থক নাসিরউদ্দিন, সোবহান, সাদেক, আলাউদ্দিন, আজিজ গাজী, হাফিজুর রহমান, ফারুক মোল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম আহত হয় বলে জানান তিনি।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াহেদ মোর্শেদ জানান, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল বারি ও বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু সমর্থকদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে বারি সমর্থক দুইজন নিহত হয়েছেন। লাশের ময়না তদন্তের জন্য শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদরে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।