
মেহেদী হাসান রিয়াদ:
রাত ৪:২৪ মিনিট।
রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা শিশুটিও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে।
চারদিক স্তব্ধ। মৃদু বাতাস বইছে। আকাশ মেঘলা। অন্ধকার নেই কোথাও একটুকু, বিদ্যুতের বাতি গুলো চারদিক আলোকিত করে রেখেছে।
পথচলা শুরু!
কর্মজীবী মানুষের ভীরে জমতে থাকা অবসাদ নিয়েই ঘুমিয়ে পরেছে তাঁরা। সকাল হলেই বেড়িয়ে পরে কল্পনার রাজ্যে।
প্রভাতে কয়েকটা পাখিরডাক শুনা যায়, তারপর যানবাহনের শব্দে প্রকৃতিতে হারিয়ে যায় সারাদিনের জন্য। সন্ধ্যার গোধূলিতে নীড়ে ফিরে আসে আবার।
গন্তব্য নিজের শুয়ার ঘর। বেলকনিতে বসে ছিলাম!
বন্দরনগরী ঘুরতে কখন যে বেড়িয়ে পরেছিলাম মনে নেই। এখন ঘরে ফিরছি।
ছোট্টছোট্ট পা ফেলে পথ চলা। সামনের দিকে এগুতে এগুতে চোখে পরে অনেক কিছুই।
ভবনের সামনে রাত-প্রহরীর অর্ধ-ঘুমন্ত রাত! ঝোপের পাশে উন্মাদ লোকটির করুণ চাহনি! সামনে এগুতেই কুকুরের দল। সবই চোখে পরে!
হাটতে হাটতে নিজেকে বড্ড একা মনে হয়। আশেপাশে কেউ নেই। যদি কেউ একজন থাকতো তাহলে হয়তো ঐসব মানুষের জীবনী নিয়ে কিছু বলতাম, বলতাম তারাও মানুষ!
একটু একটু করে এগুতে থাকি। সামনের টঙ্গটা খোলাই ছিলো। সঙে সঙে পকেটে হাত চলে যায়, দেখতে পাই একটা অর্ধ পুরনো দশ টাকার নোট। এগিয়ে যাই টঙ্গের দিকে, “মামা এক কাপ চা আর একটা ডার্বি দিও”। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সিগারেট জ্বালাই। মিনিট কয়েক পর চা শেষ, মামার হাতে দশটাকাটা দিয়ে অবশিষ্ট একটাকা পকেটে নিয়ে গন্তব্যে আবার পথচলি। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। আস্তে আস্তে সিগারেট জ্বলছে।
সামনেই বড় সড়কটা। তার বাম দিকে আমার গন্তব্য। হাটা শুরু করলাম সেদিকেই। গলির সামনে আসতে আসতে সিগারেট শেষ, তখন মনে হলো আরেকটা সিগারেট হলে ভালোই হতো। পকেটে পর্যাপ্ত টাকাকড়ি না থাকায় একটাতেই সন্তুষ্ট।
গলির পাশেই বড় করব স্থান। গতকাল দুপুরে বাসার পাশের একটা লোককে দাফন করা হয়েছে। চোখ তুলে তাকালেই হয়তো কবরটা দেখা যেতো। ওদিকে তাকানো হয় নি।
আনমনা হয়ে গান ধরি,
‘আমার জানালা দিয়ে … আমার জানালা একটু খানি আকাশ দেখা যায়,
একটু বর্ষা, একটু গ্রীষ্ম, একটু খানি শীত ।
গলির মধ্যদিয়ে সামনে এগুতেই কাঁচাবাজার। দোকানীরা বাহন থেকে তাদের ব্যবসায় সামগ্রী নামাতে ব্যস্ত। কয়েক মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে তাদের কাজ গুলো দেখলাম। তারপর দুটো মোড় পেরিয়ে সোজা বাসার নিচে।
পশ্চিম দিকে তাকাতেই চোখ পরে আকাশে দিকে। কয়েকটা তারা। মিটমিট করে জ্বলছে। অগণিত দূরে তারাদের বাস।
একটু অপেক্ষার পর নিজের গন্তব্য পৌঁছে গেলাম।
তখনো চোখের সামনে ভেসেছিল রাস্তার পাশের সেই লোক গুলো, ছোট্ট শিশুটা, পথের ধারে শুয়ে থাকা উন্মাদ লোকটা!
সহানুভূতি নিয়ে কেউ কেউ বেঁচে থাকে রাস্তার ধারেই। আবার কেউ কেউ চলে যায় না ফেরার দেশে। এসব ভাবতে ভাবতে সময় ফুরিয়ে গেলো, চোখ গুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
হাত দিয়ে চোখ মোড়াতে মোড়াতে নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই বেলকনিতেই।
মানুষের পৃথিবী অনেক বড়। শুধু স্বপ্নের হাতছানিতে বেড়িয়ে পরলেই হয়, ঘরে বন্ধী থেকেও পুরো পৃথিবী বেড়ানো যায়। কল্পনার রাজ্যে সে নিজেকে রাজা ভাবা যায়। সুন্দর এক রাজ্য, যেখানে কোন অসহায় মানুষ থাকবে না। কোনো মানুষ আর সহানুভূতি নিয়ে বাঁচবে না!
বাঁচবে আশায়, বাঁঁচবে ভালোবাসায়!!
লেখকঃ মেহেদী হাসান রিয়াদ
ইনচার্জ – অনলাইন বিভাগ, দৈনিক দেশবাংলা।