
স্বাধীন এ দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রহণযোগ্য মানের কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না। স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই তারা দেশ পরিচালনায় যোগ্য বলে পরিচিত হন, আইন প্রণেতা হিসেবেও দক্ষ বলে বিবেচিত হন তারা। কিন্তু সাংবাদিক হতে হলেই ন্যূনতম ‘স্নাতক পাশধারী’ হতে হবে, অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অন্তত এক যুগের।
অতিসম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়ে সর্বত্র সাংবাদিক নিবন্ধন (তালিকাভুক্ত) করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতেই সাংবাদিকদের যোগ্যতা, দক্ষতার মিনিমাম ক্রাইটেরিয়া নির্ধারন করে দেয়া হয়। কিন্তু কে বা কারা ‘যোগ্য সাংবাদিকের’ ক্রাইটেরিয়া প্রস্তুত করলেন? কেইবা নির্ধারন করলেন দক্ষ সাংবাদিকতার ব্যারোমিটার? সাংবাদিকতায় সভ্য, ভদ্র, সর্বোচ্চ শিক্ষিত, জ্ঞ্যানীরাই যুক্ত হতে পারবেন…এটাই যদি হয় সরকারি ভাবনা, তাহলে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাশেই গন্ডিবদ্ধ করা হলো কেন? কেন জার্নালিজম বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স পাশকে মিনিমাম যোগ্য বলে ধরা হলো না? কেনইবা তা আন্ডার মেট্রিক পর্যন্ত নামিয়ে নেয়া হলো না?
সত্যিই তো সাংবাদিকতায় অর্ধশিক্ষিত মানুষ থাকবে কেন? আন্ডার গ্র্যাজুয়েটরা সাংবাদিক হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেলে দেশ তো গোল্লায় যাবে! খুবই ভাল এবং সরকারের মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে পরিচ্ছন্ন করে নেয়া যেতেই পারে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দেশ, সরকার, জনগণের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে থেকে যারা সবচেয়ে গুরুত্ববহ দায়িত্বটি পালন করেন তারা হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি। দেশের স্বার্থ রক্ষা থেকে শুরু করে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সেবাসহ ভাগ্য বদলের প্রতিটি কাজেই তাদের ব্যতিক্রম যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধার সাক্ষর রাখতে হয়। সবার আগে এই জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষা, কায়িক পরিশ্রম, সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, উদার, ত্যাগীর সার্টিফিকেট অর্জনসহ নানা কর্মকান্ডের ছক পরিকল্পনা প্রস্তুতের যোগ্যতা, দক্ষতার নিবন্ধন করা অতি জরুরি বৈ কি। সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখার আগে দেশের প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে, সংসদ সদস্য পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা গ্রাজুয়েশন নির্ধারণ করা দরকার। তা না হলে সঠিক গণতন্ত্র, সভ্যতার বিকাশ, গঠনমূলক কর্মকান্ডের কোনো দৃশ্যপট ফিরে আসবে না।
একজন সাংবাদিক শুধু সাংবাদিকই নয় একজন ভালো মানের লেখকও বটে। যার যোগ্যতা তাঁর লেখার মাধ্যমেই ফুটে ওটে। একজন সাংবাদিক যথাযথ গবেষণালব্ধ তথ্য, লেখনী এবং প্রতিবেদন রচনা করে তিনি গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেন। মুদ্রিত মাধ্যমরূপে সংবাদপত্র, সাময়িকী, ইলেকট্রনিক মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন, রেডিও এবং ডিজিটাল মাধ্যমরূপে অনলাইন সাংবাদিকতায় সংবাদ প্রচার প্রকাশে নিরপেক্ষতার সাক্ষর রাখেন। সেখানে লেখা ও ভাষ্যের পরতে পরতে তাকে গ্রহণযোগ্যতা ও পূর্ণাঙ্গ আস্থার প্রমান দিতে হয়।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সাংবাদিকরাও প্রগতির পক্ষে, ঘুণে ধরা সবকিছুর পরিবর্তন চাই, চাই শিক্ষিত সাংবাদিক। এতে মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা যে নিশ্চিত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এর আগে চাই প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য পর্যন্ত গ্র্যাাজুয়েশন নির্ধারণ হোক। আমরাও চাই রাজনৈতিক দলগুলোতে শিক্ষিত রাজনীতিবিদরা এগিয়ে আসুক, তারাই পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও সভ্য, শৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজের প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখুন।
শুধু আইন প্রণেতা হয়ে সংসংদে হাততালি আর হাত তুলুন, ‘হ্যাঁ’ বলুন আর ‘না’ বলুন, এটাই যদি তাদের আসল যোগ্যতা হয় তা হলে কিছু বলার নেই। আমরা দেখতে চাই, সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদেরও পরিচ্ছন্ন করার নানা ক্রাইটেরিয়া নিশ্চিত করা হচ্ছে। বায়ুমন্ডলের চাপ পরিমাপের মতো সাংবাদিকদের যোগ্যতা মাপার ব্যারোমিটার বসানোর সঙ্গে সঙ্গেই জনপ্রতিনিধিদের গ্রহণযোগ্য মাত্রা নিশ্চিতকরণের মেশিন স্থাপন হোক। সমানতালেই এগিয়ে যাক রাষ্ট্র, জনগোষ্ঠী…..
মাসুদ লস্কর, গণমাধ্যমকর্মি