
মাদারীপুর প্রতিনিধি:
সাংবাদিক পরিচয়ে আশ্রয় নিয়ে সাংবাদিক দম্পত্তিকেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বনাশ ঘটিয়েছে দুই কুলাঙ্গার। তারা নারী সাংবাদিকের ছবি সংগ্রহ করে নিচের অংশে নগ্ন চিত্র যুক্ত করে ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ভূইফোড় অনলাইন পোর্টালে। এরপর পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে সীমাহীন মানসিক যন্ত্রণায় ওই সাংবাদিক দম্পত্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন বিপর্যন্ত করে দিয়েছে। মাদারীপুর জেলা সদরে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে এশিয়ান টিভির কথিত ঢাকার সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম খান ও তার সহযোগিরা। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের ১০ ঘন্টার মধ্যে মাদারীপুর সদর মডেল থানার পুলিশ ঢাকার সাভার ও গুলশান থেকে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম খান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রিয়াজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে ওই চক্রের প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।
প্রেসব্রিফিংকালে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, সংঘবদ্ধ এই চক্র এশিয়ান টিভির লোগোযুক্ত গাড়ি ও ব্যুম ব্যবহার করে শিকারের সন্ধানে দেশব্যাপী চষে বেড়ায়। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সরলমনা বহু মানুষ চাহিদামাফিক টাকা পয়সা দিয়েও নিজেদের রক্ষা করতে পারছে না।
প্রতারকচক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম খানের (৩৬) বাবার নাম সিরাজ খান, মাতা: মোসাম্মৎ সাহেরা বেগম, বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন যোদ্ধা করিসিং গ্রামে। বর্তমানে সিঙ্গাইর থানার (মানিকগঞ্জ) ধল্লী ইউনিয়নের পূর্ব রাস্তার ৩৩০ নম্বরস্থ শাহীনের বাসায় ভাড়া থাকে। তার প্রধান সহযোগী হিসেবে ছিল রিয়াজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে ইসলাম চৌধুরী (৩৮) পরিচয় দেয়া প্রতারকের প্রকৃত নাম আঃ ছালাম, পিতা ওয়াজেদ আলী, মাতা জোহরা বেগম, তার বাড়ি ঝালকাঠি সদরের কলেজ রোডে।
সাইফুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এ সাংবাদিক টিম এক দিন এক রাত মাদারীপুরে অবস্থান নিয়ে অজ্ঞাত কী সব কাজে ছোটাছুটি করে ঢাকায় ফিরে আসে। তবে আসার সময় আশ্রয় নেয়া নারী সাংবাদিকের ল্যাপটপ থেকে তাদের স্বামী স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি, ভিডিও চুরি করে আনে তারা। ঢাকায় ফিরেই নারী সাংবাদিকটির বিভিন্ন ছবির নিচের অংশে নানা নগ্ন দৃশ্য সংযোজন করে তা পাঠিয়ে দেয় তার স্বামীর ইনবক্সে। এরপর সাইফুল ইসলাম তার ব্যবহৃত ০১৭১৬২৩৫২৬৩ নাম্বার থেকে ওই সাংবাদিক দম্পত্তিকে নানারকম ভয়ভীতি দেখায় এবং নারী সাংবাদিককে অশালীন নানা প্রস্তাব দিতে থাকে। একপর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং তা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পরিশোধ না করলে নগ্ন দৃশ্যাবলী অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয় কুলাঙ্গার সাইফুল। মানসিক চাপ ও ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে কিছু নগ্ন ছবি ওই সাংবাদিক দম্পত্তির পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশী ঘনিষ্ঠজনদের কাছে পাঠিয়েও দেয়।
অনৈতিক অযৌক্তিক দাবি পূরণে ব্যর্থ দম্পত্তিকে দিন রাত ০১৮৪৫৯১২৯৭৬, ০১৭১৭৪৩৭৯৩৫ (বিকাশ), ০১৯১১১১২৪৩৭, ০১৮৮৬৪৪৯৫৬৩, ০১৭১২৬২৯২৫৫, ০১৮১৪১১৭৭৯৭ ইত্যাদি মোবাইল নাম্বার থেকে অব্যাহত জুলুমবাজি চালাতে থাকে। একপর্যায়ে নিজস্ব ফেইসবুক টাইমলাইনে এবং দুটি নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালে নারী সাংবাদিকের ছবি যুক্ত করে সংবাদ প্রকাশের নামে নগ্নতার কল্পকাহিনী ছড়িয়ে দেয় কুলাঙ্গার সাইফুল। উপায়ন্তরহীন অবস্থায় ভুক্তভোগী দম্পত্তি মাদারীপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ দাখিল করেন।
মাদারীপুর মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর রোমান মোল্লার নেতৃত্বে একদল পুলিশ তৎক্ষনাত অভিযানে নামে এবং ঢাকার সাভার ও গুলশানসহ বিভিন্ন স্থানে টানা ১০ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে কথিত এশিয়ান টিভির সাইফুল ইসলাম খান ও তার সহযোগী রিয়াজুল ইসলাম ওরফে আঃ ছালামকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তারা উভয়েই এ ঘৃণ্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে ক্ষমা চায়। তাছাড়া তাদেরকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু কোন কিছুতেই পুলিশকে টলাতে না পেরে সাইফুল কুলাঙ্গার ও তার সহযোগী আটকে পড়ে থানা হাজতে। আজ রোববার তাদেরকে মাদারীপুর মডেল থানায় নেয়া হলে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা থানায় জড়ো হয় এবং কুলাঙ্গার সাইফুলকে লক্ষ্য করে জুতা, স্যান্ডেল ও থুথু নিক্ষেপ করে ঘৃণা প্রকাশ করে। গতকাল রোববার বিকেলেই মডেল থানা পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে প্রেসব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।