
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায় সর্বস্তরের সাংবাদিকদের ব্যানারে সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যার প্রতিবাদ ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নতুন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের সাংবাদিকবৃন্দ।
সেমবার (১৮ জুলাই) রাত ৯ টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের চিলিজ চাইনিজ রেস্টুরেন্টের কনফারেন্সে রুমে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের সাংবাদিকদের সমন্বয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এ কর্মসূচীর ঘোষণা করেন।
নতুন করে দেওয়া কর্মসূচীর ঘোষণায় স্ব স্ব সাংবাদিক সংগঠনের ব্যানারে আগামী ২০শে জুলাই বুধবার সকাল ১১টায় একটি মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী ২৪ জুলাই রবিবার কুষ্টিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সকাল ১১টা থেকে রুবেল হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবীতে আমরণ অনশন পালনেরও ঘোষণা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কুষ্টিয়া এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখ, এডিটরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূরুন্নবী বাবু, সহ সভাপতি ডা. গোলাম মওলা, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ্য লিটন উজ জামান, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) সহ-সভাপতি মীর আরিফিন বাবু, সাংবাদিক অধিকার ফোরাম কুষ্টিয়ার সভাপতি ও কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) নির্বাহী সদস্য মিলন উল্ল্যাহ, চ্যানেল ২৪ এর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি শরিফ বিশ্বাস প্রমুখ।
এছাড়াও এ সভায় কর্মসূচী পালনের সময় স্ব স্ব সাংবাদিক সংগঠনকে নিজস্ব সংগঠনের ব্যানারসহ উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে ৭ জুলাই সাংবাদিক রুবেল হত্যার বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব ও কুষ্টিয়া এডিটর ফোরামের জরুরী সভায় ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কুষ্টিয়ার স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ ঘোষণা করা হয়, শুক্রবার (৮ জুলাই) লাশ দাফন শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল, শনিবার (৯ জুলাই) কুষ্টিয়া মডেল থানার সামনে কলম বিরতি, মঙ্গলবার (১২ জুলাই) কুষ্টিয মডেল থানার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ, বুধবার (১৩ জুলাই) জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, বুধবার (১৩ জুলাই) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও, বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালায় ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করে।
সাংবাদিক রুবেল হত্যার এই ঘটনাটি দেশের বহুল প্রচারিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়
পরে গত শনিবার(১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের দাপ্তরিক ই-মেইল থেকে প্রেরিত র্যাব-১২, সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পনি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে সাংবাদিক রুবেল হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন কুষ্টিয়া পৌর এলাকার থানাপাড়ার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মো. কাজী সোহান শরিফ (৪৪) ও কুষ্টিয়া পৌর এলাকার চর কুঠিপাড়ার মৃত খন্দকার হারুন অর রশিদের ছেলে খন্দকার আশিকুর রহমান জুয়েল (৪০)সহ দুজনকে গ্রেপ্তারের দাবি করে র্যাব।
এদের মধ্যে গ্রেপ্তার কাজী সোহান শরিফ ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলো। পরে গ্রেপ্তার আসামিদেরকে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা নৌ-পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই রবিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক রুবেল কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী গেট সংলগ্ন নিজ পত্রিকা অফিসে অবস্থানকালে মোবাইলে একটি কল পেয়ে তার অফিস থেকে বের হয়ে এন এস রোডের সিঙ্গার মোড়ের দিকে যান। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। এ ব্যাপারে সাংবাদিক রুবেলের ছোট ভাই মাহাবুব রহমান সোমবার (৩ জুলাই) রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার জিডি নম্বর- ২০৩। এর পর গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী নির্মাণাধীন কুমারখালী যদুবয়রা সংযোগ সেতুর শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টাস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কুষ্টিয়ার খবরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং জাতীয় দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান রুবেলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা নৌ-পুলিশ।
এ ঘটনায় শুক্রবার (৮ জুলাই) নিহত হাসিবুর রহমান রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-১২। কিন্তু অদ্যবধি রুবেল হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার বিষয়ে পুলিশে নির্লিপ্ত ভুমিকার অভিযোগ তুলেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লকের হাবিবুর রহমানে ছেলে। রুবেল সাংবাদিকতার পাশাপাশি কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি মার্কেটে আল মদিনা ভান্ডার নামে ছোট ভাইয়ের সাথে কাঁচামালের আড়ত (পাইকারি) ব্যবসা করতেন। এছাড়াও তিনি অপর এক পাটনারের সাথে বিএডিসিতে ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন।