
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক রুবেল হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িত খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে কুষ্টিয়া জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিকবৃন্দের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাংবাদিকরা।
সোমবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা ও উপজেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় সাংবাদিক নেতারা রুবেল হত্যাকান্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোসহ হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের গ্রেফতার দাবি জানান কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের সাংবাদিকবৃন্দের নেতৃবৃন্দ। নৃসংশ এই হত্যাকান্ডের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও পুলিশ ও মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে এঘটনায় নূন্যতম সন্তোষজনক তথ্য উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আন্দোলনের সমন্বয়ক কুষ্টিয়া এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখ অবিলম্বে সাংবাদিক রুবেল হত্যার রহস্য উন্মোচনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি করেন। অন্যথায় এবার কাফন মিছিলসহ আবারও লাগাতার কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেন। এ সময় তিনি ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে কাফনের কাপড় পরিহিত মিছিলসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। ।
কুষ্টিয়া টিভি জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য হাসান আলীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, এডিটরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়ার কাগজের প্রকাশক সম্পাদক, এসএ টিভির প্রতিনিধি নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি রবি বার্তার প্রকাশক সম্পাদক গোলাম মওলা, নির্বাহী সদস্য মাই টিভির কুষ্টিয়ার প্রতিনিধি কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান শিপলু, নিউজ টুয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুজ্জামান, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর টিভির স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব (কেপিসি) ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব (কেপিসি)র সাধারণ সম্পাদক গাজী টিভির প্রতিনিধি সোহেল রানা, কুমারখালী কাঙাল হরিনাথ মজুমদার প্রেসক্লাবের সভাপতি কেএমআর শাহিন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কারশেদ আলম প্রমুখ।
এদিকে সাংবাদিক রুবেল হত্যা মামলায় সন্দেহজনক দুইজনকে গ্রেপ্তারের দাবি করে
শনিবার(১৬ জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের দাপ্তরিক ই-মেইল থেকে প্রেরিত র্যাব-১২, সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পনি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে র্যাবের দাবি করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া পৌর এলাকার থানাপাড়ার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মো. কাজী সোহান শরিফ (৪৪) ও কুষ্টিয়া পৌর এলাকার চর কুঠিপাড়ার মৃত খন্দকার হারুন অর রশিদের ছেলে খন্দকার আশিকুর রহমান জুয়েল (৪০)। গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন র্যাব -১২ সিপিসি-১ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. ইলিয়াস খান।
এদের মধ্যে গ্রপ্তার কাজী সোহান শরিফ ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলো।
পরে গ্রেপ্তার আসামিদেরকে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পাবনাী ঈশ্বরদী লক্ষীকুণ্ডা নৌ-পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে গত ৭ জুলাই কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সম্মুখে অবস্থান কর্মসূচীপালনসহ পূর্বঘোষিত নানা কর্মসূচী পালন করে আসছিলো সাংবাদিকরা। সাংবাদিক রুবেল হত্যার বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব ও কুষ্টিয়া এডিটর ফোরামের জরুরী সভায় ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কুষ্টিয়ার স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ ঘোষণা, শুক্রবার (৮ জুলাই) লাশ দাফন শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল, শনিবার (৯ জুলাই) কুষ্টিয়া মডেল থানার সামনে কলম বিরতি, মঙ্গলবার (১২ জুলাই) কুষ্টিয মডেল থানার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ, বুধবার (১৩ জুলাই) জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, বুধবার (১৩ জুলাই) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও, বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালায় ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করে।
সাংবাদিক রুবেল হত্যার এই ঘটনাটি দেশের বহুল প্রচারিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই রবিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক রুবেল কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী গেট সংলগ্ন নিজ পত্রিকা অফিসে অবস্থানকালে মোবাইলে একটি কল পেয়ে তার অফিস থেকে বের হয়ে এন এস রোডের সিঙ্গার মোড়ের দিকে যান। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। এ ব্যাপারে সাংবাদিক রুবেলের ছোট ভাই মাহাবুব রহমান সোমবার (৩ জুলাই) রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার জিডি নম্বর- ২০৩। এর পর গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী নির্মাণাধীন কুমারখালী যদুবয়রা সংযোগ সেতুর শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টাস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কুষ্টিয়ার খবরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং জাতীয় দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান রুবেলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা নৌ-পুলিশ।
এ ঘটনায় শুক্রবার (৮ জুলাই) নিহত হাসিবুর রহমান রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-১২। কিন্তু অদ্যবধি রুবেল হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার বিষয়ে পুলিশে নির্লিপ্ত ভুমিকার অভিযোগ তুলেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লকের হাবিবুর রহমানে ছেলে। রুবেল সাংবাদিকতার পাশাপাশি কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি মার্কেটে আল মদিনা ভান্ডার নামে ছোট ভাইয়ের সাথে কাঁচামালের আড়ত (পাইকারি) ব্যবসা করতেন। এছাড়াও তিনি অপর এক পাটনারের সাথে বিএডিসিতে ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন।